লাচুং (lachung) সিকিমের একটি পাহাড়ি শহর, সিকিমের সিটি গ্যাংটক থেকে প্রায় ১২৫ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত। লাচুং একটি বর্ডার এলাকা এখান থেকে চায়না তিব্বত খুব কাছে তাই এই এলাকায় প্রবেশেও আছে বিপত্তি যেমন অনেকেদেশের জনগণ এই শহরে প্রবেশ করতে পারেনা। আর যারা পারে তাদের নিতে হয় পারমিশন ( এর মাঝেও থাক বিশাল কন্ডিশন বা রুলস যেমন সরকারি চাকুরিজিবি বা কূটনীতি পাসপোর্ট, ইত্যাদি প্রবেশ নিষেধ।) যেহেতু বর্ডার এলাকা তাই যেকোনো সময় পরিস্থিতি বেগতিক হতে পারে যদিও এদিক দিয়ে সিকিম যথেষ্ঠ সচেতন তখন এন্ট্রি অফ করে দেয়। এছাড়াও বর্ষায় এবং ফুল উইন্টারে এখানে যাওয়া যায়না। বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাঝে মাঝেই পাহাড়ি ঢলে রাস্তা ভেংগে যায়। এছাড়াও তুষারপাতের কারনে এখানে প্রচুর বড়ফ জমে যায় যার কারনেও প্রবলেম তৈরি হয়। আর শীতের বেশিরভাগ সময়ই অনেক গুলো প্লেস বন্ধ থাকে যেমন ইয়ামথাং ভ্যালি, জিরো পয়েন্ট বা কাটাও। আসুন এবার বিস্তারিত জানি।
কিভাবে যাবেনঃ লাচুং যেতে হলে ঢাকা থেকে শুরু করলে বাংলা বান্ধা অথবা বুরিমারি বর্ডার ক্রস করতে হবে। এর পর শিলিগুরি হয়ে গ্যাংটক। গ্যাংটকে লোকাল ট্যুর অপারেটর থেকে ফুড এবং হোটেল প্যাকেজ, গাইড এবং পারমিশন নিয়ে নিতে হবে এবং পরের দিন সকাল ৯ টার মধ্যে লাচুংয়ের উদ্যেশ্যে যাত্রা।
ঘুরাঘুরির পারফেক্ট সময়ঃ আমাদের অর্থাৎ বাংলাদেশিদের জন্য অকটোবর থেকে এপ্রিল কারন আমরা বরফ পছন্দ করি আর এই সময়েই বরফ পাওয়া যায় লাচুংয়ের অনেক গুলো ট্যুরিস্ট স্পটে যেমন জিরো পয়েন্ট, ইয়ামথাং ভ্যালি, কাটাও।
এক্টিভিটিসঃ লাচুং পুরোটাই একটিভিটিস মানে এখানে বরফের পাহাড় এবং এমন রাস্তা দেখতে দেখতেই সময় চলে যায়। এমনি লাচুং থেকে জিরো পয়েন্ট, কাটাও এবং ইয়ামথাং ভ্যালি যেতে পারেন। তবে একদিনে আপনি হয় কাটাও নাহয় জিরো পয়েন্ট + ইয়ামথাং ভ্যালি যেতে হবে। লোকাল ট্যুর অপারেটর রা ইয়ামথাং ভ্যালিকে প্যাকেজের এর মধ্যে এটাচ করে যদি জিরো পয়েন্ট যেতে চান তাহলে আপনাকে অতিরিক্ত ২৫০০ থেকে ৩০০০ রুপি দিতে হবে ড্রাইভারকে। নরমালি জানুয়ারি, ফেব্রুআরি, মার্চ মাসে জিরো পয়েন্ট এবং ইয়ামথাং ভ্যালি বন্ধ থাকে বরফের কারনে।
খোলা এবং বন্ধের সময়ঃ এমনি বাংলাদেশিদের জন্য রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া তবে বন্ধের নির্দিষ্ট সময় নেই যেকোনো সময় বন্ধ এবং খোলা থাকে কারন অতিবৃষ্টি বা অতি তুষারপাতের কারনের মাঝে মাঝেই বন্ধ থাকে। তাই এর নির্দিষ্ট তথ্য পেতে হলে গ্যাংটক থেকেই নিতে হবে।
যাতায়াত ব্যবস্থাঃ লাচুং যেতে হলে আপনাকে ফুল প্যাকেজ (৬/৮ জনের প্যাকেজ) নিতে হবে এর মধ্যে গাড়ি, খাবার, হোটেল এবং ইয়ামথাং ভ্যালি অন্তর্ভুক্ত। ফুল প্যাকেজ ১২০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা নিবে। (একটি কথা যে কজনই যান না কেনো তার ফুল প্যাকেজ বিক্রি করে। মানে ৮ জন যা খরচ ৫ জন সেম খরচ) জিরো পয়েন্ট বা কাটাও ঘুরতে হলে অতিরক্ত ২৫০০ থেকে ৩০০০ রুপি দিতে হবে কারন মাঝেই মাঝেই বরফের কারনে রাস্তা বন্ধ থাকে তাই এই প্লেস গুলা প্যাকেজে ধরেনা। গাড়ির ধরণ টাটা সুমো ৮ জন বসা যায়, ভলেরো ৭ জন বসা যায় ইনোভা ৬ জন বসা যায়।
এন্ট্রি ফি এবং পারকিং সূবিধাঃ লাচুংয়ের প্যাকেজ কিনার পর আর কোনো এন্ট্রি ফি নেই। লাচুং হোটেলে পারকিং ব্যবস্থা আছে এবং ট্যুরিস্ট স্পটেও টাকা লাগেনা পারকিং করতে।
কোথায় খাবেনঃ প্যাকেজ নিয়েছেনতো সব এখানেই। যাত্রা পথে একটি ধাবায় থামাবে ওখানে বুফে খাবার খাবেন এবং বাকি খাবার হোটেলেই চলবে এবং খাবারের মান খুবই ভাল তাই টেনশনের কিছু নাই।
কোথায় থাকবেনঃ লাচুংয়ে বেশিরভাগ সময় শীত থাকায় হোটেল গুলোতে গিজার ব্যবস্থা আছে এবং পর্যাপ্ত শীতের কাপড় থাকে তাই হোটেলের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসবেনা। এবং বিল্ডিং হওয়ায় রুমে একটু ঠাণ্ডা কম। তবে অবশ্যই যথেষ্ঠ কাপড় নিয়ে যেতে হবে।
সুবিধা অসুবিধাঃ সুবিধা গুলো আগে বলি আমরা বাঙ্গালিরা তুষার বা বরফের পাহাড়ের প্রতি দুর্বল তাই এখানে অনেক গুলো পাহাড় যা বরফে ঢাকা থাকে এবং চোখ জুড়ায়। অসুবিধা হলো অনেক হাইট এবং এখানে যাদের শ্বাস কষ্ট আছে তাদের সাথে ইনহেলার রাখতে হবে এবং ছোট অক্সিজেন কিনতে পাওয়া যায়। যা আপনি নিয়ে নিতে পারেন গ্যাংটক থেকে। যার সমস্যা নেই তারও অনেক সময় এই সমস্যা দেখা দেয় তাই সাথে রাখা ভালো।
রেস্ট্রিক্ট এড়িয়া পারমিশনঃ লাচুং + সাংগু লেকে পারমিটের জন্য লাগবে মোট ১ কপি ইনারলাইন পারমিট ফটো কপি এবং ৬ কপি পাসপোর্ট এর ফটোকপি, ৬ কপি ভিসার ফটোকপি, ৬ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। সব ডকুমেন্টস জমা দিতে হয় ট্যুর অপারেটরের কাছে তারাই পারমিশন নিয়ে থাকে।
ABME/VROMONINFO