মহাস্থানগড় | বগুড়া

0
409

সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

মহাস্থানগড়( mohasthangarh bogra )বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। মহাস্থানগড় প্রাচীন পুন্ড্রনগরী এর বর্তমান নাম। মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার অন্তর্গত। শিবগঞ্জ থানার অন্তর্ভূক্ত হলেও এটি বগুড়া জেলা শহরের ১৩ কিঃমিঃ উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। মহাস্থানগড়ের বিস্তীর্ণ ধবংসাবশেষ আড়াই হাজার বছরের পুরানো স্থাপনার গৌরবোজ্জল ইতিহাসের এক নীরব স্বাক্ষী। এখানকার অতীত ঐতিহ্য গুলি আপনাকে মুগ্ধ করবে। মহাস্থানগডড়কে পুরো বাংলাদেশের সবেচেয়ে পুরনো এবং তথ্যবহুল স্থান হিসেবে ধরা হয়। আপনি এখানে আসলে শুধু যে পুরনো স্থাপনাগুলোই দেখতে পাবেন তা কিন্তু না। সেগুলোর পাশাপাশি আপনার ঐতিহাসিক জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে। জানতে পারবেন প্রচীন জনপদ, জনগন রাজা ও তার শাসনামল সম্পর্কে।

আড়াই হাজার বছরের পুরানো এই স্থাপনা সম্পর্কে ইতিহাস থেকে জানা যায় শক্তিশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং অন্যান্য রাজারা তাদের প্রাদেশিক রাজধানী হিসাবে মহাস্থানগড় ব্যবহার করতেন। এর পর কালক্রমে পুন্ড্রবর্ধনের শেষ রাজা পরশুরামকে (১২০৫-১২২০) যুদ্ধে পরাজিত করে পুন্ড্রবর্ধন জয় করেন সুলতান বলখী। সুলতান বলখী এর পরবর্তী কোন রাজা বা রাজবংশের ইতিহাস সঠিক ভাবে পাওয়া যায় না। ধারনা করা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে এই নগরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে মাটিচাপা পরে।

এরপর ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে “ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন” সর্বপ্রথম পুন্ড্রনগরের ধংসাবশেষ আবিস্কার করেন। ১৯২৮-২৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্ব প্রথম মহাস্থানগড়ের প্রথাগত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কে.এন. দীক্ষিত এর তত্ত্বাবধানে শুরু করা হয়। সেখান থেকে বেশকিছু স্থাপনা ও তথ্য পাওয়া যায়। ১৯২৯ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যায়ক্রমে এর খননকাজ চলছে। বর্তমানে আমরা মহাস্থানগড়ের যে দর্শণীয় স্থানসমূহ দেখতে পাই এর সবগুলোই মাটি খুরে আবিষ্কার করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারনা এখানে আরও অনেক পুরাকীর্তি রযেছে। ২০১৬ সালে মহাস্থানগড়কে সার্কের রাজধানী ঘোষনা করা হয়। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে।

যা যা দেখবেনঃ
মহাস্থান গড়ের পশ্চিম পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর আর পদ্মাদেবীর বাসভবন। এসব দেখে আপনি যেতে পারনে শীলাদেবীর ঘাটে। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এই ঘাটের পশ্চিম পাশেই রয়েছে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত।

এসব অলৌকিক আর পৌরাণিক নিদর্শন দেখার পর আপনি যেতে পারেন গড়ের মিউজিয়ামে। মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এখনও।

অনেক গল্প রয়েছে বেহুলার বাসর ঘর নিয়ে। আপনি চাইলে বেহুলার বাসর ঘরটাও দেখতে পারবেন। এ জন্য মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড থেকে আপনাকে আরও ২ কি. মি.দক্ষিণ পশ্চিমে যেতে হবে। এখানে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা ।এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই পরিচিত।

এসব নির্দনের পাশাপশি রয়েছে শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী মাহি সাওয়ার (র:) এর মাজার। মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে এই মাজারটি অবস্থিত। কথিত আছে হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে এই ওলির আগমন ঘটে। সে জন্যই তাঁকে বলা হয় মাহি সাওয়ার।

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার কল্যাণপুর থেকে হানিফ, শ্যামলি, গ্রীণ লাইন পরিবহনসহ অনেক বাস সার্ভিস আছে বগুড়া পর্যন্ত। এসব পরিবহনের ভাড়া লাগবে ৫শ থেকে১ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় চলে যাবেন বগুড়া শহরে।

কোথায় খাবেনঃ
খাওয়ার জন্য আপনাকে কোন চিন্তাই করতে হবে না। বগুড়াতে খওয়ার জন্য অনেক উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। বগুড়া সদর কিংবা মহাস্থানগড়ের আশেপাশে খাওয়ার জন্য অনেক হোটেল-রেষ্টুরেন্ট পাবেন। সেখান থেকেই আপনার খাওয়া সেরে নিন।

কোথায় থাকবেনঃ
সেখানে কিছু ভাল মানের হোটেল আছে। এর পাশাপাশি কিছু মোটেল ও আছে ।।সেখানে খুব আরামেই রাত্রি যাপন করা যায়।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।