সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ
গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গীপাড়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সমাধিস্থল( Tomb Of Bangabandhu )। টুঙ্গীপাড়ার বাঘিয়ার নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে এই সমাধি সৌধ। গ্রিক স্থাপত্য শিল্পের আদলে নির্মিত সৌধের লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো টাইলস দিয়ে কারুকার্য করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কবরের পাশেই তার বাবা-মায়ের কবর। এই তিন কবরকে ঘিরেই নির্মাণ করা হয়েছে মূল গম্বুজ। সৌধের ওপর দেয়ালে জাফরি কাটা যা দিয়েই সূর্যের আলো এসে উপরে কাচের কারুকাজ দিয়েও আলো পড়ে কবরে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে। এখানে ঢুকতেই পাথরের গায়ে লেখা রয়েছে দাঁড়াও পথিক বর যথার্থ বাঙালি যদি তুমি হও। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে। এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। এ দেশের মুক্তিদাতা, বাংলার নয়নের মনি।
যা যা দেখবেনঃ
মধুমতী নদীর তীরে পাটগাতির পরেই টুঙ্গিপাড়া। গোপালগঞ্জ শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে এই টুঙ্গিপাড়া। নির্জন নিরিবিলি উপজেলা শহর এখন। এখানে চারদিকে গাছগাছালি, ফল ও বিল। যেন ছবির মতো সাজানো এই টুঙ্গিপাড়া। এই টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের (Sheikh Mujibur Rahman) সমাধি। বঙ্গবন্ধুর সমাধির পাশেই তাঁর বাড়ি। এখানে ঢুকতেই পাথরের গায়ে লেখা রয়েছে – “দাঁড়াও পথিক বর যথার্থ বাঙালি যদি তুমি হও। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধিস্থলে। এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। এ দেশের মুক্তিদাতা, বাংলার নয়নের মণি”।
এই টুঙ্গীপাড়াতেই ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে মৃত্যুহীন প্রাণ নিয়ে জন্ম মাটি টুঙ্গীপাড়ায় ফিরে আসেন তিনি। পরদিন পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
২০০১ সালে ৩৮ দশমিক ৩০ একর জায়গার ওপর ১৭ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই সমাধিসৌধ। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ এই সমাধিসৌধ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় এক বছর আট মাস সময়ে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ২৮তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। মধুমতিবিধৌত বাইগার নদীর পাড়ে তালবীথি আর ধানক্ষেতের আবহে লাল সিরামিক ইট ও সাদাকালো টাইলস দিয়ে গ্রিক স্থাপত্যশিল্পের আদলে নির্মিত হয়েছে এ সৌধ কমপ্লেক্স। দুই পাশে উদ্যান, মধ্যে করব। চারদিকে কালো টাইলস, মাঝখানে ধবধবে সাদা টাইলস দিয়ে এ কবর বাঁধানো। এখানে প্রতিদিনই দর্শনার্থী ভিড় করে। চমৎকার এই সমাধি কমপ্লেক্সে আরও রয়েছে গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী হল, প্রশাসনিক ভবন। বকুলতলা চত্বর ও ঘাটলা বাঁধা পুকুর যেন পরিবেশকে করে তুলেছে মোহনীয়।
লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো টাইলস দিয়ে গ্রিক স্থাপত্য শিল্পের আদলে নির্মিত সৌধের কারুকার্যে ফুটে উঠেছে বেদনার চিহ্ন। কমপ্লেক্সের সামনের, দু’পাশের উদ্যান পেরোনোর পরই বঙ্গবন্ধুর কবর। পাশেই তার বাবা-মায়ের কবর। এই তিন কবরকে ঘিরেই নির্মাণ করা হয়েছে মূল টম্ব। সাদা পাথরে নির্মিত গোলাকার এক গম্বুজ বিশিষ্ট মাধিসৌধের ওপর দেয়ালে জাফরি কাটা। এই জাফরি কাটা দিয়েই সূর্যের আলো আসে। উপরে কাচের কারুকাজ দিয়েও আলো ছড়িয়ে পড়ে কবরে। চারদিকে কালো টাইলস ও মাঝখানে শ্বেত-শুভ্র টাইলসে বঙ্গবন্ধুর কবর বাঁধানো। উপরের অংশ ফাঁকা। কবর-তিনটি ঘিরে রাখা হয়েছে সংক্ষিপ্ত রেলিং দিয়ে। ২০০১ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু-কন্যা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, মসজিদ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, উন্মুক্ত মঞ্চ, বকুলতলা চত্বর, স্যুভেনির কর্নার, প্রশস্ত পথ, মনোরম ফুলের বাগান ও কৃত্রিম পাহাড়।
মাজার কমপ্লেক্সের পাঠাগারে দেড় হাজারেরও বেশি বই রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘আমার কিছু কথা’, শেখ হাসিনার লেখা ‘আমার পিতা শেখ মুজিব’, ‘ওরা টোকাই কেন’ প্রভৃতি মূল্যবান-গ্রন্থ।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোপালগঞ্জে সড়কপথে মাওয়া ফেরী ঘাট হয়ে যেতে হবে। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: মধুমতী পরিবহন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, দোলা পরিবহন, কমফোর্ট লাইন। এগুলোতে করে আপনি গোপালগঞ্জ পর্যন্ত আসতে পারবেন। এর পরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যেতে হলে আপনাকে গোপালগঞ্জের লঞ্চ ঘাট থেকে বাসে করে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছাতে পারবেন। আপনাকে টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতীতে বাস থেকে নামতে হবে। টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছাতে বাসের ভাড়া পরবে প্রায় ২৫/- টাকা।
এছাড়া পাটগাতী থেকে ব্যাটারিচালিত বাহনে করে ১০/- টাকা ভাড়ায় ৬ মিনিট থেকে ১০ মিনিটে সমাধিসৌধে পৌঁছাতে পারবেন।