মুছাপুর ক্লোজার | নোয়াখালী

সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

( Muchapura closure )নাগরিক জীবনে সকল ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে দিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রায়ই আমাদের মন হাঁপিয়ে উঠে। ছুটির দিনে তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কোনো জায়গায় বেড়িয়ে আসলে মন্দ হয় না। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নোয়াখালীর ক্লোজার থেকে। দেখতে সমুদ্র সৈকতের মত এই নদীপাড়কে বলা হয় ‘মিনি কক্সবাজার’।

মুছাপুর ক্লোজার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে নির্মিত। প্রথম দেখাতে মনে হবে সৈকত। কিছুক্ষণ পরে ভুল ভাঙবে। খুঁজে পাবেন নদীপাড়ে সাগরের আবহ। তাই এ ক্লোজারের নাম দেয়া হয়েছে ‘মিনি কক্সবাজার’। মুছাপুর নদীর তীরে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই ক্লোজার। ২০০৯ সাল থেকে কয়েক দফা বাজেট বরাদ্দ দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেষ্টায় ক্লোজারটি নির্মাণ করা হয়। সাগরে যখন জোয়ারের পানি উতলে উঠে, তখন অনন্য এক সৌন্দর্য বিকশিত হয় মুছাপুর ক্লোজারের ছোট ফেনী নদীতে। ঢেউয়ের উচ্চাস ছুয়ে যাবে আপনার মনকেও। কয়েক কিলোমিটার প্রস্থের সমুদ্র সৈকতের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখতে পারেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত । দূর থেকে দেখা  ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা  নৌকাগুলো আপনার মনে দিয়ে যাবে এক সূর লহরীর ছোঁয়া। রাতের সৈকতে দাড়ালে বিন্দু বিন্দু আলোকণা ভেসে বেড়াতে দেখবেন নদীতে। মাছধরা নৌকাগুলো কেমন যেন এক ছন্দ রেখে আকাশের তারার বিন্যাসের মতো হেলেদুলে চলেছে। আর আলোর ছায়াগুলো নাচতে থাকে রাতের কালো জলে। সে এক অন্যরকম দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এখানে সবুজ শ্যামল প্রকৃতি, নিবিড় বন, গ্রামীণ পরিবেশ, পাখির কোলাহল, মৎস্যজীবি মানুষদের জীবন সব মিলিয়ে অন্যরকম এক দোতনা সৃষ্টি করে প্রকৃতিপেমী মানুষদের মনে। পানির ছল ছল শব্দ আর  বিশাল আকাশের নিচে অবারিত নির্মল বাতাস আর সবুজ বনানী আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকমের বনজ গাছ । এখানে আসলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল, বিশাল সমুদ্র সৈকত। সূর্যদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্যের সৌন্দর্য  আপনাকে মুগ্ধ করবে। এছাড়া ট্রলারে কিংবা স্পীডবোটে করে চরে ঘুরতে যেতে পারবেন।

১৯৬৯ সালে এখানে বনবিভাগ বনায়ন শুরু করে। মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় চরের মধ্যে দক্ষিণ মুছাপুর মৌজায় ৮শ ২১ দশমিক ৫৭ একর, চরবালুয়া (দিয়ারা) মৌজায় ১হাজার ৮শ ৬১ দশমিক ১০ একর ও চরবালুয়া মৌজায় ৬শ দশমিক ১৫ একর সর্বমোট ৩হাজার ২শ ৮২দশমিক ৮২একর বনবিভাগের জমি জুড়ে এই বনাঞ্চল ।  বাগানে রয়েছে ঝাউ, কেওড়া, পিটালী, খেজুর, লতাবল, গেওয়া, শনবলই, বাবুলনাটাই, আকাশমনিসহ বিভিন্ন ছোট প্রজাতির গাছও রয়েছে। শীতের মৌসুমে সাইবেরিয়া থেকে আসা অতিথি পাখিদেরও দেখা যায় এখানে।  শিয়াল, বন বিড়াল, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। বনের সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলে পাবেন শীতল ছায়া ও কোথাও কোথাও বিশাল খোলা জায়গা। তার পাশেই দেখা যাবে দিগন্তজোড়া সৈকতের অপার মাধূর্য।

কিভাবে যাবেনঃ

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা থেকে বাংলাবাজার। সেখান থেকে চৌধুরীবাজার পার হয়ে ২ কিলোমিটার রাস্তা হয়ে চার রাস্তার মোড় দিয়ে পূর্বদিকে জনতা বাজার, এরপর দক্ষিণে ১.৫ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে একটু পূর্বে গেলেই মুছাপুর ক্লোজার।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *