কবি তীর্থ দৌলতপুর (জাতীয় কবি কাজী নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থান)

0
292

সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল( kaji najrul islam mamorible place ) ও তার স্ত্রী নার্গিস  এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান কবি তীর্থ দৌলতপুর।  ১৯২১ সালে (বাংলা ২৩ চৈত্র ১৩২৭) নজরুল ইসলাম কুমিল্লা হয়ে মুরাদনগরের দৌলতপুরে আসেন এবং ৭১ দিন অবস্থান করেন । নজরুল দৌলতপুরে বসেই ১৬০টি গান এবং ১২০টি কবিতা রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলোর মধ্যে- ‘বেদনা-অভিমান’, ‘অবেলা’, ‘অনাদৃতা’, ‘পথিক প্রিয়া’, ‘বিদায় বেলা’ প্রভৃতি।

কবির দীপ্ত পদচারণা কুমিল্লাকে করেছে মহিমান্বিত। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত কবি ৫ বার কুমিল্লায় আসেন। এ ৫ বারে তিনি ১১ মাসের বেশি সময় কাটান কুমিল্লা শহর ও জেলার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে।

প্রথমবার ছিলেন ৮ জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার আসেন ১৯২১ সালের নভেম্বরে ছিলেন ডিসেম্বর পর্যন্ত। তৃতীয়বার আসেন ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিলেন জুন পর্যন্ত, চতুর্থবার ১৯২২ সালের অক্টোবরথেকে ২৩ নভেম্বর, পঞ্চমবার অর্থাৎ শেষবার কবি এসেছিলেন ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরেতবে চলে যাওয়ার তারিখ অজ্ঞাত। তার এই সফরের সাক্ষ্য হয়ে আছে দোলনচাপা, অগ্নিবীণা, ছায়ানট, ঝিঙ্গেফুল, পুবের হাওয়া প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ। কবির বিয়ে থেকে শুরু করে দু’দফায় গ্রেফতার হন এ জেলায়। প্রমীলা দেবীর বাড়ি, ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ে কবিতা গানের আসর, ঝাউতলায় গ্রেফতার হওয়া, বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার, নানুয়া দীঘির পাড়, দারোগা বাড়ি, ইউছুফ স্কুল রোড, মহেশাঙ্গন, কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও মাঠ, দক্ষিণ চর্থায় শচীন দেব বর্মনের বাড়ি, নবাব বাড়ি, ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাড়ি, নজরুল এভিনিউ, কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, রানীর দীঘির পাড়, রেলস্টেশন, কোতোয়ালি থানা, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং মুরাদনগরের দৌলতপুরসহ অসংখ্য স্থানে কবির স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

কুমিল্লায় কবির প্রথম আগমন ঘটে মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। এ গ্রামেরই কবির পূর্ব পরিচিত আলী আকবর খানের আমন্ত্রণে। কবি আলী আকবর খানের বোনের মেয়ে সৈয়দা নার্গিস আরা খানমকে একই বছরের ১৭ জুন বিয়ে করেন। যা ছিল তার জীবনের প্রথম বিয়ে।

কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কবি বাসর রাতেই দৌলতপুর ছেড়ে কুমিল্লা শহরে চলে আসেন। শহরে কবি ইন্দকুমার সেনের বাসায় অবস্থানকালে তার ভ্রাতৃজয়া গিরিলা দেবীর একমাত্র কন্যা আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে প্রমীলার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল কলকাতায় তাদের বিয়ে হয়। ১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে কুমিল্লায় তিনি ব্রিটিশবিরোধী গান গাইবার কারণে গ্রেফতার হন। ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর শহরের ঝাউতলা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো গ্রেফতার হন কবি। সর্বশেষ কবি পঞ্চম ও শেষবারের মতো কুমিল্লায় আসেন ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর।

১৯৬২ কুমিল্লার তৎকালীন জেলা প্রশাসক কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কান্দিরপাড়-ধর্মপুর রেলস্টেশন সড়কের নামকরণ করেন নজরুল এভিনিউ। ১৯৮৩ সালে কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সৈয়দ আমিনুর রহমানের উদ্যোগ ও জেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় শ্বেতপাথরের ফলক লাগানো হয়। এসব ফলকে কবির গান, কবিতা, ছড়া ও বাণী তুলে ধরা হয়।

কিভাবে যাবেনঃ

কুমিল্লা শহর থেকে বাসে অথবা সিএনজি তে করে মুরাদনগর উপজেলা যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেনঃ

কুমিল্লার বিখ্যাত স্থানসমূহ দেখতে গিয়ে থাকার জন্য রয়েছে কুমিল্লা বার্ড (কোটবাড়ি), হোটেল নূরজাহান (পদুয়ার বাজার), রেড রোফ ও কিউ প্যালেস (রেইসকোর্স), আশিক (নজরুল এভিনিউ), আল রফিক, নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে হোটেল সোনালী, হোটেল মেরাজ ও হোটেল আমানিয়া, বাদশা মিয়ার বাজারে আছে “ময়নামতি হোটেল”, “মেলোডি”, কান্দিরপারে “দিনা হোটেল”, মনোহরপুরে “ইয়াম ইয়াম” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।