সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ
( Nikoli Haor )ব্যস্ত ঢাকা শহর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত অপূর্ব এক জলাভুমি। বর্ষাকাল এখানে বেড়াতে আসার উপযুক্ত সময়। এখানে এসে আপনি শহরের যান্ত্রিক জীবনের সকল ক্লান্তি ও অবসাদকে ধুয়ে ফেলতে পারবেন। হ্যা, আমি কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চল নিকলীর কথা বলছি। ভ্রমন পিয়াসু মানুষের জন্য নিকলী হতে পারে এক অভুতপূর্ব অভিজ্ঞতা! ঢাকা থেকে সকালে রওয়ানা হলে সারাদিন ঘুরে আবার বিকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে ব্যাক করা সম্ভব। তবে রাতে থেকে রাত এবং সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে না পারলে মন কিছুটা অতৃপ্তই থেকে যাবে!
বর্ষায় এই হাওরে নৌকা ভাসালে মনে হবে অকূল দরিয়া পার হতে হচ্ছে। কূল নাই কিনার নাই, শুধু অশান্ত ঊর্মিমালা ওঠানামা করছে বিরামহীনভাবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা হাওর এলাকা ‘গেইটওয়ে’ নামে খ্যাত। সীমানা দক্ষিণে অষ্টগ্রাম থানা, উত্তরে মিঠামইন, উত্তর-পূর্ব কোণে ইটনা, উত্তর-পশ্চিমে কটিয়াদী, পশ্চিমে নিকলী এবং পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা। নিকলী হাওর ছাড়া কিশোরগঞ্জে আরও অনেক হাওর রয়েছে। যেমন হুমাইপুর হাওর (বাজিতপুর), সোমাই হাওর (অষ্টগ্রাম), বাড়ির হাওর (মিঠামইন), তল্লার হাওর (বাজিতপুর-নিকলী-অষ্টগ্রাম), মাহমুদুর হাওর (নিকলী), সুরমা বাউলার হাওর ইত্যাদি।
কিশোরগঞ্জে জেলার আকর্ষণীয় দিক এই হাওরগুলো। কেবল ভূপ্রকৃতিগত বৈচিত্র্যের কারণে নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই হাওর এক বিরাট স্থান জুড়ে আছে। হাওর মূলত সাগর শব্দের অপভ্রংশ মাত্র। উচ্চারণ বিকৃতিতে সাগর থেকে সায়র এবং সায়র থেকে হাওর হয়েছে বলে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। বর্ষাকালে বিশাল হাওর এলাকায় অথৈ জলরাশি দেখলে সাগরের কথাই মনে করিয়ে দেয়। হাওর আর কিছু নয়, এটা অপেক্ষাকৃত বড় জলাভূমি।
শীতকালে যে প্রান্তর ফসলে পূর্ণ বা শুকনো মাঠ কিংবা বালুচর, বর্ষাকালে সেখানে এমন জলধারা যে চারদিক প্লাবিত করতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। শুধু পানির প্রবাহ নয়, প্রচণ্ড ঢেউ আর দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি সাগরের বিশালত্বের কথাই মনে করিয়ে দেয়। দ্বীপের মতো গ্রামগুলো যেন ভেসে আছে পানির বুকে। বর্ষাকালে হাওরের এই পাগল করা ঢেউয়ের দোলায় নৌকার পাল উড়িয়ে চলার সময় উল্টিয়ে পড়ছে যেন! সেই হাওরে নাকি শুষ্ক মওসুমে পানি থাকে না এক ফোঁটা, যতদূর চোখ যায় শুধু ধানের সবুজ শিষ বা সোনারঙা ধানের সুবিপুল সমারোহে ভরপুর হয়ে ওঠে। বর্ষায় এমন থৈ থৈ পানি দেখে সেটা বিশ্বাস করা করা কঠিন। এখানে আরও অবিশ্বাস্য এক রাস্তা আছে, সাবমার্সিবল রোড, বর্ষায় ডুবে থাকে। আর শুকনোর সময় দিব্যি পথ চলার রাস্তা। পানির জন্য এ রাস্তার কোনো ক্ষতি হয় না।
জোসনা রাতে হাওরে নৌকায় ভ্রমন করলে বিদ্যুতবিহীন জোছনামাখা এই হাওর আপনাদের দিবে অপার ভালো লাগা। রাত পেরিয়ে প্রত্যুষের আলো ফুটার সাথে সাথে চারদিকে ঝিলিমিলি নীল আলো দেখতে পাবেন। ঢেউয়ের ছন্দদোলায় মনে হবে রক্তলাল সূর্য একবার পানির নিচে ডুবছে, আবার ভেসে উঠছে। ভোরের আলোয় ছোট ছোট নৌকা নিয়ে হাওরের মাছ ধরছে জেলেরা, আর সেই দৃশ্য দেখে কার না ভাল লাগবে? সে এক অদ্ভুত দৃশ্য! চারদিকে শুধু পানি আর পানি, মাঝে মাঝে পানির ওপর ভাসমান গ্রাম যা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে!
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে নিকলীর সরাসরি বাস আছে। বাস ভাড়া ১৫০ টাকা। আবার সায়েদাবাদ থেকে কিশোরগঞ্জের বাসে গিয়ে কালিয়াচাপরা সুগার মিল গিয়ে টেম্পুতে নিকলী হাওরের সামনেই নামা যাবে। ১৬০ কি.মি. দূরত্ব। সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা (যাত্রাবাড়ীর ট্রাফিক জ্যাম বাদে)। জিরাতে পারেন ইনএনওর বাংলোয়। বাংলো থেকে কাছেই ঘাটে গিয়ে বিভিন্ন আকারের ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করতে পারেন বা আগে থেকে চুক্তি করে নিতে পারেন মসিয়াপুর বাজারের নজরুল সাউন্ড থেকে। ৬০-৭০ জন বজ াকারের নৌকায় অনায়াসে যেতে পারে। মোবাইল নম্বর : ০১৯১৪৩২১৯৭৫।