প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসে (খ্রিস্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা (Rasmela) এবং পূণ্যস্নানের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত। যদিও বলা হয়ে থাকে, ২০০ বছর ধরে এ রাসমেলা হয়ে চলেছে , তবে জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত, নাম হরিভজন (১৮২৯—১৯২৩), এই মেলা চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। দুবলার চরে সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউবা আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ। দুবলার চরের রাসমেলায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দূর-দূরান্তের শহরবাসী এমনকি বিদেশি পর্যটকেরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। তিনদিনব্যাপী এ মেলায় অনেক বিদেশী পর্যটকেরও সমাগম হয়।
কারও মতে ১৮১২ সালে অগ্রহায়ণ মাসের কার্তিক পূর্ণিমায় রাসযাত্রার দিন সন্ধ্যাবেলা রাজার নতুন গৃহে প্রবেশ উপলক্ষে রাসযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে রাসমেলার প্রবর্তন। আবার কারও মতে ১৮৯০ সালে বর্তমান মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠাকালে এ মেলার সূত্রপাত। তবে সূচনা যখনই হোক না কেন, শুরু থেকেই এই মেলা কোচ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও অংশগ্রহণে লালিত পালিত ও পল্লবিত হয়েছে। আজও লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এই মেলাকে কেন্দ্র করে।
মোংলা থেকে নদীপথে বঙ্গোপসাগরপাড়ের সুন্দরবনের দুবলার চরের দূরত্ব প্রায় দেড়শ নটিক্যাল মাইল। প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণের হাজার হাজার মানুষ দুবলার চরের আলোরকোলে জড়ো হয়ে রাস উৎসবে মিলিতি হয়। বিধাতাকে সন্তষ্ট ও কৃপা লাভের আশায় সেখানে রাতভর চলে পূজা-অর্চনা, কীর্তন, গানসহ নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। এ সময় পুণ্যার্থীরা ফানুস উড়িয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে ও মন্ত্রপাঠসহ আরাধনা করে থাকে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা মনে করে, তাদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণ এখানে এসে পুণ্যস্নান করেছিলেন। তাই বহু বছর ধরে তারাও তা করে আসছে। ধর্মীয় ভক্তিশ্রদ্ধায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন গত প্রায় দুই যুগ ধরে জাঁকজমকভাবে পালন করে আসছেন দুবলার চরের এই রাস উৎসব। উৎসবটি মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হলেও এটি এখন সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।