বছর ঘুরে চলে এসেছে শীত। এই শীতে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় তা নিয়ে অনেকেই অনেক রকম ভ্রমণ পরিকল্পনা করছেন। যেহেতু শীতে যাচ্ছেন তাহলে শীতকালের জন্যে ভ্রমণের জন্য উপযোগী অপরুপ সৌন্দর্যের দ্বীপ মনপুরা (Monpura)।
বাংলাদেশের বৃহওম দ্বীপ ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা। উত্তাল মেঘনার কোল ঘেসে জেগে ওঠা তিনদিকে মেঘনা আর একদিকে বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ সাজে সজ্জিত লীলাভূমি মনপুরা। এখানে না আসলে বোঝাই যাবেনা সবুজের দ্বীপ মনপুরায় কি সৌন্দর্য লুকায়িত আছে। পর্যটনের কি অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে পুরানো এ দ্বীপে। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই দ্বীপটি। পর্তুগিজরা এই দ্বীপে বসবাস করেছে।
ভোলা জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিন পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষে মেঘনার মোহনায় চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মনপুরা উপজেলা প্রায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। ৩৭৩.১৯ বর্গকিলোমিটার এ দ্বীপে আরও রয়েছে মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন, হরিণের অভয়াশ্রম ও চৌধুরী প্রজেক্ট। মনপুরা দ্বীপটিকে নিয়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে ‘মনপুরা’ নামের চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ার পর থেকে এই দ্বীপটির নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই দ্বীপটি মানুষের কাছে বেশ পরিচিতি লাভ করে।
দ্বীপের উত্তর সাকুচিয়ার আলমবাজারে রয়েছে একটি হরিণের অভয়াশ্রম। জোয়ারের সময় হরিণগুলো প্রধান সড়কের কাছে চলে আসে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হরিণের পাল যখন রাস্তা পার হয় তখন ২/৩ মিনিট পর্যন্ত মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে হয়। আপনার ভাগ্যে থাকলে আপনিও দেখা পেয়ে যেতে পারেন হরিণের পালের।
দ্বীপে চৌধুরী প্রজেক্টে আছে লেক। লেকের পাড় জুড়ে সারি সারি লাইনে নারিকেল গাছ। পাড়ের একপাশে লেক অন্য পাশে মেঘনা। বিকালের সময়টা খুবই চমৎকার কাটবে আপনার এখানে। যদিও মেঘনার ভাঙ্গনে ও ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, কোমেন, মোরার আঘাতে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রজেক্টটি। তবুও সৌন্দর্য রয়েছে চৌধুরী প্রজেক্ট। এছাড়া বাধেরহাটের পাশে রয়েছে কয়েকটি মাছ চাষের দিঘি ও বিশাল কেওড়া বাগান।
যানবাহনঃ এ দ্বীপের প্রধান যানবাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল। এছাড়া রয়েছে টেম্পু গাড়ি, অটোরিকশা, বোরাক। সাইক্লিং করার জন্য এই দ্বীপ খুবই উপযোগী। মোটরসাইকেলে ৭০০/৮০০টাকা ভাড়ায় পুরো মনপুরা অনায়াসে ঘুরতে পারবেন।
কখন যাবেনঃ শীতকাল মনপুরা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়।
কি খাবেনঃ মনপুরা দ্বীপে শীতকালে হাসেঁর মাংস ভূনা খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও মহিষের দুধের দধি, ইলিশ, কোরাল, বোয়াল, গলদা চিংড়ি, শোল, শিং ও কই বেশ পরিচিত। মেঘনা নদীর টাটকা ইলিশ ও মহিষের কাঁচা দুধ খুবই সুস্বাদু। হোটেলে কম খরচে খেতে পারবেন।
যা যা দেখবেনঃ সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, ম্যানগ্রোভ প্রজাতির হাজার হাজার গাছ, মাছ চাষের দিঘি, দ্বীপের দক্ষিনে কক্সবজারের মতো কিছুটা আভাস, সবচাইতে আকর্ষণীয় মনপুরায় প্রত্যক্ষভাবে হরিণের ছুটাছুটি দেখা যায়।
কিভাবে যাবেনঃ মনপুরা বিছিন্ন দ্বীপ হওয়াতে যখন তখনই আপনি যেতে পারবেন না। তাসরিফ -১ও তাসরিফ -২। এছাড়া এমভি ফারহান-৩/এমভি ফারহান-৪ নামে দুটি বিলাশ বহুল লঞ্চ রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ১০ নাম্বার প্লাটুন থেকে প্রতিদিন বিকাল পাঁচটায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এই লঞ্চ করে আপনি সকাল ৭ টা নাগাদ মনপুরা দ্বীপে পৌঁছতে পারবেন।
ফারহান লঞ্চের বুকিং নং– ০১৭৮৫৬৩০৩৬৫ , ০১৭৮৫৬৩০৩৭০, ০১৭৮৫৬৩০৩৬৬
তাসরিফ লঞ্চের বুকিং নং– ০১৭৩০৪৭৬৮২২, ০১৭৬৮৯৬২১০৮, ০১৭৩০৪৭৬৮২৪
যাত্রা পথে লঞ্চ থেকেও সূর্যোদয় দেখতে ভুলবেন না। সময় লাগবে ১২/১৩ ঘন্টা। লঞ্চের লঞ্চে কেবিন: সিঙ্গেল ৮০০,ডাবল ১৬০০, ডেক ৩০০ । আবার ফেরার পথে মনপুরা রামনেওয়াজ লঞ্চঘাট থেকে দুপুর ২টায় এবং আড়াইটায় লঞ্চ দুটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
তবে, বর্ষায় এই রুটে যাওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যাদের আগে কখনো নদীপথে বা ট্রলারে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেই তারা কখনো এ রুটে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না৷ কারণ এখানের নদী খুবই উত্তাল।
ছোট এই লঞ্চগুলো চলার সময় খুব বেশি দুলতে থাকে এতে আপনি ভয়ে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। তখন আনন্দের কথা ভুলে গিয়ে মন খারাপ করে কাঁদতে শুরু করবেন।
কোথায় থাকবেনঃ থাকার জন্য মনপুরা দ্বীপে সরকারি ডাকবাংলো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবণ আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সরকারি ডাকবাংলো ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবণে স্বল্প থাকতে পারবেন। এ ছাড়া মালিকানা আবাসিক হোটেল সিমা, মাহি, হানিফ, আরাফ, ওহি, রাহি রয়েছে। এতে অল্প খরচে থাকতে পারবেন। মনপুরা ঘাট থেকে হোটেল: প্রতি বাইক ১০০টাকা ( চালক সহ মোট তিনজন ওঠা যাবে )
এছাড়াও মনপুরায় থাকার জন্য রয়েছে সরকারী ডাকবাংলো প্রতি রুমে শেয়ার বেসিসে ৪ জন থাকা যায় ভাড়া -৪০০-৫০০ টাকা।
যোগাযোগ — কেয়ারটেকার মাকসুদ 01762449004
হোটেল ভাড়াঃ
হানিফ হোটেল -একজন ১০০/-
আরাফ হোটল -একজন ২৫০/-
হানিফ হোটেলের মানেজার মোশারফ- 01920460119 (২০১৬ সালে কালেক্ট করা তাই এখন এই নাম্বার আছে কিনা জেনে নিবেন)
আবাসিক হোটেল ছাড়াও ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন। ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা মনপুরা। একটা ভালো জায়গা দেখে তাবু ফেলে নিন। পড়শীদের সাথে রফা করে রান্নার আয়োজন করতে পারবেন।
ডাকবাংলো অয়েবঃ http://monpura.bhola.gov.bd/site/view/hotel