সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ( Rayer Bazar Bodhyo Bhumi ) ঢাকার রায়ের বাজার ইটখোলায় নির্মিত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তিলগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সহযোগীদের সহায়তায় দেশের যে-সকল শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্যদের হত্যা করেছিল তাঁদের শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ এটি নির্মাণ করা হয়। যে স্থানটিতে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল সেখানেই এ স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়। নিহত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও অন্যান্য পেশাজীবী।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী হানাদানর বাহিনী কর্তৃক বুদ্ধজীবী হত্যা একটি ন্যাক্করজনক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী এবং আমাদের মুক্তিবাহিনী নিয়ে একটি যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। এর ফলে স্থল, নৌপথ, ও আকাশ পথে একযোগে আক্রমন করা সম্ভব হয় হানাদার বাহিনীর উপর। এতে তারা সহজেই পর্যুদস্ত হয়। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাকিস্তানি শাসকচক্র বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। তারা ভেবেছিল এদেশকে মেধাশূন্য করা গেলে বাঙ্গালি জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাবে।
এজন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু থেকেই তারা হত্যা করেছিল বাঙ্গালি জাতির বিবেক, চেতনা, মননশীলতা, ঐতিহ্য ও সংষ্কৃতির ধারক ও বাহক এ মাটির সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। তবে ১০ থেকে ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে এই বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপধারন করে। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এদেশীয় একশ্রেনীর দালাল এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, নাট্যকার, শিল্পী প্রভৃতি শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং এই হত্যাযজ্ঞ ঘটায়। তারা ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহিদুল্লাহ কায়সার, ডাঃ ফজলে রাব্বীসহ এদেশের প্রথম সারির অনেক বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজয় লাভের কিছুদিন পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ রায়ের বাজারের উক্ত স্মৃতিসৌধের স্থানটিতে পাওয়া যায়। তাদের স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখতে এই বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয় যা রায়ের বাজার বধ্যভূমি “স্মৃতিসৌধ” নামে পরিচিত।