রমনা পার্ক | ঢাকা

0
417

সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

রমনা পার্ক ঢাকা( ramna park dhaka ) শহরের রমনা এলাকায় অবস্থিত একটি উদ্যান। এখানে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

ইতিহাসঃ
এই উদ্যানটি ১৬১০ সালে মোঘল আমলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময়ে রমনার পরিসীমা ছিল বিশাল এলাকা জুড়ে। মোঘলরাই রমনার নামকরণ করেন। পুরানো হাইকোর্ট ভবন থেকে পূর্বের সড়ক ভবন পর্যন্ত মোঘলরা বাগান তৈরী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কোম্পানী আমলে এ এলাকা জঙ্গলে পরিণত হয়। ১৯ শতকে ব্রিটিশ শাসক এবং ঢাকার নবাবদের সহায়তায় এটির উন্নয়ন সাধন করা হয়। ঢাকা শহরের নিসর্গ পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছিল ১৯০৮ সালে লন্ডনের কিউই গার্ডেনের অন্যতম কর্মী আর. এল প্রাউডলকের তত্ত্বাবধায়নে। শহরের সেই নিসর্গ পরিকল্পনার ফল ছিল রমনা পার্কের উন্নয়ন। ২০ বছর লেগেছিল সে কাজ শেষ হতে।

বর্তমানে রমনা পার্কে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। রমনার বটমুলে ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন অনেক জনপ্রিয়।

পার্কের ইতিকথাঃ

রমনা পার্ক শুধু ঢাকা শহরের নয়, বরং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি পার্ক। এটি বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন রয়েছে। পার্কের বর্তমান আয়তন ৬৮ দশমিক ৫ একর। এর লেকের আয়তন ৮ দশমিক ৭৬ একর। ১৬১০ সালে ঢাকায় মোগলদের শাসন পাকাপোক্ত হওয়ার পর বাগানের অনুরাগী মোগলরা এ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তখন এর নাম ছিল বাগ-ই-বাদশাহি। এখনকার ইস্কাটন থেকে নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,

সচিবালয় পুরো এলাকাই ছিল রমনা পার্কের চারপাশে। কোম্পানি আমলে রমনার দক্ষিণের একটি অংশে রেসকোর্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস। একপর্যায়ে ঢাকা থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে রমনা এলাকা ক্রমে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে। মোগল আমলে গড়ে ওঠা রমনা উদ্যান মোগল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে তার সৌন্দর্য হারায়। ঔপনিবেশিক যুগে (১৮২৫ সালে) ঢাকার ইংরেজ কালেক্টর মি. ডস ঢাকা নগরীর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন এবং কারাগারের বন্দীদের দিয়ে রমনার জঙ্গল পরিষ্কার করে বের করেন ডিম্বাকৃতির একটি অংশ।

পরিষ্কার করা অংশটিকে কাঠের রেলিং দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয় রেসকোর্স। ইংরেজদের আমলে এই রেসকোর্সের উত্তর-পশ্চিমে একটি টিলাঘর তৈরি করে চারপাশে লাগানো হয় গাছ-গাছালি। এই রেসকোর্সকে কেন্দ্র করেই আবার রমনার আভিজাত্য ফিরে আসে। ১৮৪০ সালের দিকে বিত্তবানেরা এ এলাকায় বাগানবাড়ি করতে থাকেন। পরে নবাব আবদুল গনি এসব বাগানবাড়ির মধ্য থেকে অবসরপ্রাপ্ত জজ জন ফ্রান্সিস গ্রিফিথের বাড়িটি কিনে নেন।

এলাকাটিকে তারাই উন্নত করে নাম দেন শাহবাগ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর মোগলদের রমনা তিন ভাগ হয়ে যায়। নবাবদের মালিকানায় থাকে শাহবাগ এলাকা। উত্তর দিকে মিন্টো রোডে হয় সিভিল স্টেশন নামে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা। মাঝখানে রেসকোর্স ও বর্তমানের রমনা উদ্যান মিলিয়ে হয় রমনা এলাকা। রেসকোর্সে পাকিস্তান আমলেই আইন করে ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একসময় রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। ১৬১০ থেকে ১৮২৪ সাল পর্যন্ত এর নাম ছিল বাগ-ই-বাদশাহি বা বাদশাহি বাগান। ১৯২৫ সালে এ স্থানটি ঘোড়দৌড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। তাই এর নাম হয় রেসকোর্স ময়দান। ১৯৭১ সালে এর নামকরণ হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ১৯৯৬ সালে এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিখা চিরন্তন স্থাপন করা হয়। ১৯৯৯ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০১৫ সালে।

বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা)-এর সম্পাদক ডা. আবদুল মতিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমনা পার্ক ঢাকা শহরের অনন্য একটি পার্ক। হাঁটাচলা, বেড়ানোর পাশাপাশি বৃক্ষ চেনার জন্যও এখানে অনেকে আসেন।’ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে এবং ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে উন্নয়ন পদক্ষেপ নিলে রমনা পার্ক রক্ষা করা ও এর ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।