atish dipankar jonmosthan

অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান

সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

( atish dipankar jonmosthan )চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, কম্বোডিয়া, ভুটান সহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নানা দেশ থেকে দলে দলে পর্যটক আসছেন বাংলাদেশের নিভৃত পল্লী বজ্রযোগিনীতে।  তাদের স্বাগত জানাতে এই পল্লীতে সে রকম কোন সাজ না থাকলেও বজ্রযোগিনীর সবুজ মাঠঘাট আর পত্রপল্লব যেন সাদরে গ্রহণ করছে এই অতিথিদের। ঢাকার যাত্রাবাড়ি-জুরাইন পেরিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা হয়ে মুন্সিগঞ্জে বজ্রযোগিনী গ্রামের এবারের অতিথি বাংলানিউজ। দুপুরেই বজ্রযোগিনীর পিচ ঢালা সরুপথ ধরে পৌঁছে যাই অতীশ দীপঙ্করের ভিটায়। সেখানে এখন নির্মিত হচ্ছে ‘অতীশ স্মৃতি চৈত্য স্থাপত্য’। 

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের পরেই বৌদ্ধদের কাছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম গুরু অতীশ দিপঙ্কর। তার জন্মভিটা এই ব্রজ্রযোগিনী গ্রামে। 

সেই জন্মভিটার খোঁজে প্রতি বছরই বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন দেশের ‍হাজার হাজার অধিবাসী বাংলাদেশে আসছেন। 

অতীশ দীপঙ্করের ভিটার পাশে মাটির নিচে বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান মেলায় সেখানে পর্যটকদের আগমন আরও বেড়েছে বলে জানালেন স্থানীয়রা। 

এখানে এখন বিদেশিদের পদচারণাই বেশি বলে জানালেন সুহবাসপুর মোড়ের চায়ের দোকানদার আবুল হোসেন। বিদেশিরা এখানে এলে তার দোকান থেকেও চা, কলা ও বিস্কুট কিনে খান বলে জানান তিনি। 

তবে বজ্রযোগিনী গ্রামে পৌঁছতে হলে সুহবাসপুর ছাড়িয়ে যেতে হবে আরও প্রায় দুই কিলোমিটার। বজ্রযোগিনী গ্রামের প্রবেশমুখে একটি ছোট্ট সাইনবোর্ড অতীশ দীপঙ্করেরবাড়ির দিক নির্দেশনা দেয়।  জন্মভিটায় পৌঁছানোর আগে বেশ কিছু দূর থেকেই চোখে পড়বে অতীশ দীপঙ্করের স্মৃতি চৈত্য স্থাপত্যের নির্মাণ কাজ। চারতলা কাঠামোর অতীশ স্মৃতি চৈত্যের নিচে রাখা আছে চীন থেকে নিয়ে আসা অতীশের দেহভস্ম।

বাংলানিউজকে চৈত্য স্তূপ নির্মাণের তত্ত্বাবধানে থাকা আখতার আহমেদ জানান, কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু ফিনিশিং এবং মঠ বসানোর কাজ এখন বাকি আছে।

এ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ‘একটি সার্কেল (চতুর্মুখী গোলাকার) আকারে চলছে অতীশ স্মৃতি চৈত্য স্থাপত্যের নির্মাণ কাজ।

প্রায় ৬০ ফিট গভীরে অতীশ দীপঙ্করের ছাইভস্ম ফেলে সেখান থেকে পাইলিং কাজ শুরু করা হয় ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি।

চারতলা সমান কাঠামোর নান্দনিক অতীশ স্মৃতি চৈত্য স্থাপত্যে ৯টি তাক দেখা গেছে।

বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ যুব’র সভাপতি প্রভাষক শ্রদ্ধানন্দ ভিক্ষু বাংলানিউজকে জানান, তিব্বতবাসীরা অতীশকে দ্বিতীয় ঈশ্বর হিসেবেই মানেন। তারা এই দেশে আসেন অতীশের টানে। এখানে এসে তারা শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে পড়েন। 

তিনি আরও জানান, স্তূপের পাশেই একটি যাদুঘর ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 

আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ এর উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, কম্বোডিয়া, ভুটান ও অন্যান্য দেশ থেকে বৌদ্ধ পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা আসবেন।  বাংলাদেশের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীও এ অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন।

তিনি বলেন, শুধু নান্দনিক সৌন্দর্য্যই নয় স্তূপের গভীরে আছে অতীশের দেহভস্ম। সেই টানে বিদেশ থেকে প্রতি মাসে অন্তত একশ’ বা দেড়শ’ জন বিদেশি পুণ্যার্থী ও পর্যটক আসেন এখানে।  

দিন চারেক আগে এখান থেকে ঘুরে গেছেন ভুটান ন্যাশনাল কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন (স্পিকার) ড. সোনম কিং। তার আগে এসেছিলেন থাইল্যান্ডের পর্যটনমন্ত্রী। এছাড়াও নিয়মিত আসছেন চীন সরকারের প্রতিনিধিরা। 

তিনি আরও জানান, অতীশ জন্ম ভিটার পাশেই নাটেশ্বরে সম্প্রতি বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মতে তৎকালীন সময়ে বিহারের বিশাল পরিধি ছিলো। বিক্রমপুরী বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো এখানে। শুধু ধর্মীয় পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও লেখাপড়া হতো এখানে।

অতীশ স্মৃতি স্থাপত্যের মূল স্থপতি হলেন রবিউল হোসাইন। পরে এর স্থাপত্যে কিছু পরিবর্তন এনে এর নকশা করেন স্থপতি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, আগের নকশা অনুযায়ী ফাউন্ডেশন পর্যন্ত কাজ হয়েছে। আনুষঙ্গিক কিছু পরিবর্তনের পর এখন এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।

তবে মূল স্থাপত্যের পাশে মিউজিয়াম, সংগ্রহশালা, অফিস কক্ষ ও লাইব্রেরির নির্মাণ এখনও বাকি আছে। 

তিনি বলেন অতীশ স্মৃতির এই স্থাপত্য আসলে একটি চৈত্য। প্রদক্ষিণের জন্য স্তূপের চারপাশ ধাপ আকারে সজ্জিত করা। ধাপগুলো ১০ ফুট চওড়া।  

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *