ইদ্রাকপুর জলদূর্গ | মুন্সীগঞ্জ

সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

প্রচলিত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে এটি একটু আলাদা। আনুমানিক ১৬৬০ সালে সুবাদার মীর জুমলা ইছামতী নদীর পূর্ব তীরে নির্মাণ করেন ইদ্রাকপুর দুর্গ( idrakpur jaladurga munshiganj )। এটার আরেকটা নাম জলদূর্গ। কারন এর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট হলো এর চারপাশের পানিবেষ্টিত পরিখা। নদীপথ শত্রুর আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখতে নির্মিত ইদ্রাকপুর জলদুর্গটি পূর্ব ও পশ্চিমে দু’ভাগে বিভক্ত। পূর্ব অংশ আয়তাকার এবং পশ্চিমের অসম আকৃতির দুটি অংশ মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ দুর্গটি নির্মিত হয়েছে।

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা শত্রু থেকে রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল এই দুর্গটি। উঁচু প্রাচীর ঘেরা এই দুর্গের চারকোণে রয়েছে চারটি গোলাকার বেস্টনী। দুর্গের পূর্ব অংশটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এবং এ অংশের দৈর্ঘ্য ৭৭ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার। বুরুজগুলির ব্যাস ৫.৫০ মিটার এবং ৪.৬০ মিটার। দুর্গের একমাত্র প্রবেশ তোরণটি উত্তর দুর্গ প্রাচীরের মাঝখানে প্রবেশপথটি ২.১০ মিটার চওড়া এবং দু’পাশে প্যানেল নক্শায় সজ্জিত। প্রবেশ তোরণের উপরে মার্লন নকশা করে সুশোভিত করা হয়েছে। দুর্গ প্রাচীরের এ অংশের দেয়াল ০.৮৮ মিটার এবং বেষ্টনী প্রাচীর ১.২২ মিটার উঁচু।

চারদিকের দেয়ালের গায়ে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র। বাংলাদেশে মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নির্দশন হিসেবে ইদ্রাকপুর দুর্গটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯০৯ সালে।

কীভাবে যাবঃ

ঢাকার গুলিস্তান থেকে মুন্সিগঞ্জগামী বাসে সদরের কাচারি নামতে হবে। এখান থেকে রিক্সায় ইন্দ্রাকপুর কেল্লায় যেতে হবে। অথবা যেকোন যায়গা থেকে কমলাপুর, সেখান থেকে ট্রেনে নারায়নগঞ্জ ভাড়া ১৫ টাকা। সময় লাগবে ১ ঘন্টার মত, তারপর বন্দরে যেয়ে মুন্সিগঞ্জগামী ছোট লঞ্চ এ চড়ে মুন্সিগঞ্জ, ভাড়া ২০ টাকা। সময় ৩৫-৪০ মিনিট। ৩০ মিনিট পর পরই লঞ্চ ছাড়ে। মুন্সিগঞ্জ ঘাটে নেমে রিকশায় ২০ টাকা ইদ্রাকপুর দুর্গের সামনে।

কী খাবেনঃ
এখানে খাওয়ার অনেক যায়গা আছে।।তা সত্ত্বেও সাথে কিছু রাখা উচিৎ।

কোথায় থাকবেনঃ
ঢাকা থেকে দিনে দিনে মুন্সিগঞ্জ ভ্রমণ শেষ করে ফিরে আসা সম্ভব। তাছাড়া জেলাশহরে থাকার সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। শহরের দু-একটি হোটেল হলো হোটেল থ্রি স্টার এবং হোটেল কমফোর্ট।ভ্রমণে গেলে মুন্সিগঞ্জের জায়গাগুলো দেখে সবশেষে পদ্মা রিজর্টে এসে থাকলে ভালো লাগবে।

যা যা দেখবেনঃ
রামপাল দীঘি

জেলার রামপালে অবস্থিত। বিক্রমপুরের রাজধানী রামপালের রাজা বল্লাল সেন জনগণের পানীয় কষ্ট দূর করার জন্য এই বিশাল দীঘিটি খনন করেন। কিংবদন্তি আছে, বল্লাল সেনের মা প্রজাদের পানীয় জলের কষ্ট দূর করতে তাকে একটি দীঘি খনন করার আদেশ দেন। বল্লাল সেন মাকে আশ্বাস দেন, তিনি (মা) যতদূর হেঁটে যেতে পারবেন ততটুকু জায়গা নিয়ে দীঘি খনন করে দিবেন। পরের দিন সকালে তার মা দক্ষিণ দিকে হাঁটতে শুরু করেন। বল্লাল সেন দেখলেন তার মা অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে চলে গেছেন। তখন তার অসুস্থতার সংবাদ পাঠালে তিনি ফিরে আসেন। সেদিন বল্লাল সেনের মা যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততটুকু দীর্ঘ দীঘি খনন করেন বল্লাল সেন।

বল্লালবাড়ি
রামপাল দীঘির উত্তর পাশে অবস্থিত বল্লাল সেনের বাড়ি। এখানে ছিল বল্লাল সেনের রাজপ্রাসাদ ও একটি পরিখা। বর্তমানে পরিখার চিহ্ন থাকলেও রাজপ্রাসাদটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

বাবা আদম শহীদ মসজিদ
জেলার রামপালের রেকাবি বাজার ইউনিয়নের কাজী কসবা গ্রামে অবস্থিত বাবা আদম শহীদ মসজিদ। এর কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উপরের একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, সুলতান ফতেহ শাহ’র শাসনামলে, ১৪৮৩ সালে মালিক কাফুর মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটির বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১০.৩৫ মিটার ও ৩.৭৫ মিটার। এর দেয়াল প্রায় ২ মিটার পুরু। মসজিদের উপরে দুই সারিতে ছয়টি গম্বুজ আছে। মসজিদের পাশেই আছে বাবা আদমের সমাধি। জনশ্রুতি আছে, বল্লাল সেনের রাজত্বকালে বাবা আদম নামে একজন ব্যক্তি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আসেন। বল্লাল সেনের নির্দেশে বাবা আদমকে হত্যা করা হলে তাকে এখানে সমাহিত করা হয়।

মীরকাদিম পুল

মুন্সিগঞ্জ শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মীরকাদিম খালের ওপর নির্মিত মুঘল আমলের পুল। প্রায় ৫২.৪২ মিটার দৈর্ঘ্যের এ পুলটি বেশ কয়েকবার সংস্কারের ফলে এর পুরনো রূপ এখন আর নেই। চুন-সুরকিতে তৈরি এ পুলটির সঠিক নির্মাণকাল জানা যায়নি।

পণ্ডিতের ভিটা
সদর উপজেলার বজ্রজোগিনী ইউনিয়নের সোমপাড়ায় অবস্থিত শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের বসতভিটা। বর্তমানে এখানে থাই স্থাপত্য রীতিতে তৈরি একটি স্মৃতিসৌধ বর্তমান।

শ্যাম শিদ্ধির মঠ
জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর বাজারের পশ্চিম দিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত এ মঠ। মঠটির দক্ষিণ দিকের প্রবেশপথের উপরের বাংলা শিলালিপি অনুযায়ী, ১৮৩৬ সালে জনৈক শম্ভুনাথ মজুমদার এটি নির্মাণ করেন। ইট নির্মিত বর্গাকোর এ মঠের দৈর্ঘ্য ৬ মিটার এবং উঁচু প্রায় ২০ মিটার।

সোনারং জোড়া মঠ
জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত পাশাপাশি দুটি মঠ। এর বড়টি শিবের উদ্দেশ্যে এবং ছোটটি কালীর উদ্দেশ্যে নিবেদিত। শিব মন্দিরটি ১৮৪৩ সালে এবং কালী মন্দিরটি ১৮৮৬ সালে নির্মিত। জানা যায়, রূপচন্দ্র নামক এক হিন্দু বণিক এর নির্মাতা।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *