লোভাছড়া | সিলেট

বিবরণঃ

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় সীমান্তের বড় বড় পাহাড় ছুঁয়ে নেমেছে ঝর্ণা( lovachora sylhet )। চারদিকে সবুজ বেষ্টিত চা বাগান, সারি সারি গাছ, পাহাড় আর বালু সমৃদ্ধ স্বচ্ছ পানির বহমান নদী। অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে প্রাকৃতিক নৈসর্গের আরেক রূপ। নাম ‘লোভাছড়া’। লোভাছড়া থেকে ভারতের পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয় খুব বেশী দূরে নয়। এখানকার যে কোন উঁচু পাহাড়ে উঠলে মেঘালয়ের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় খুব কাছে থেকে দেখা যায়। লোভাছড়ায় আছে একটি চা বাগান, নাম লোভাছড়া টি এষ্টেট।

লোভাছড়া চা-বাগানের মালিক জেমস লিও ফারগুসন। মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের ৫ নম্বর সাবসেক্টরের অধীন স্কটিশ বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি যোদ্ধা তিনি।সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাটের লোভাছড়া চা-বাগানে বসবাস হলেও জেমস লিও ফরগুসনের পৈতৃক নিবাস স্কটল্যান্ডে। নানকা তাঁর ডাকনাম। লোভাছড়া চা-বাগানসহ আশপাশের এলাকার মানুষজন তাঁকে ডাকনামেই বেশি চেনেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছিলেন নানকা। কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত টানা ১৭ বছর।

এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় ‘নৌকা প্রতীকের টানে’ প্রায় দুই দশক বিরতি দিয়ে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবারও ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছেন। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত লোভাছড়া নদীর পাশেই ব্রিটিশ আমলে প্রায় ১৮৩৯ একর জমির উপর গড়ে ওঠে লোভাছড়া চা-বাগান। বাগানের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য এবং পশ্চিমে বাংলাদেশের একটি পিকনিক স্পট ও লালাখাল চা-বাগান অবস্থিত।

বাড়তি আকর্ষণ ‘খাসিয়া পুঞ্জি’। এখানকার খাসিয়াদেরও আদি নিবাস ছিল খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়। বহু বছর পুর্ব থেকে এদের লোভাছড়ায় বসবাস। লোভাছড়া থেকে ৫ কি. মি উত্তরে গভীর জঙ্গলের ভিতরে কয়েকটি বিশাল আকৃতি পাথর রয়েছে। এক একটি পাথরের উচ্চতা হবে প্রায় ৩০ ফুট। প্রতিটি পাথর গোলাকার। চওড়া হবে প্রায় ৫০ ফুট।

এই পাথরগুলোর অবস্থান পাহাড়ের নিচে। পাহাড়ের কোল জুড়ে গাছপালার সবুজ বর্ণিল রংয়ে আচ্ছাদিত হয়ে আছে লোভাছড়া চা-বাগান। মাটির রাস্তা ধরে যতদূর এগুনো যায় চোখে পড়ে ছোট-বড় নানা ধরনের গাছপালা। চা-বাগানের মাঝে গাছগুলো সারি-সারিভাবে সাজানো। এর সৌন্দর্য্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। লোভাছড়ার পাশ দিয়ে ভারত সীমান্তে হারিয়ে গেছে ‘নুনগাঙ’। ‘নুনগাঙ’ প্রায় নদীর মত হলেও এটি আসলে ঘোলা পানির একটি খাল যা লোভাছড়া নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে। খালের উপর বেশ পুরনো তবে এখনো মজবুত স্টীলের তৈরী একটি ঝুলন্ত ব্রীজ রয়েছে, যার উপরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ-ভারত উভয় সীমান্তের পাহাড়ঘেরা আবছা ছবি চমৎকারভাবে ভেসে ওঠে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভোর সকালে লোভাছড়া বাগানে হরিণ, খরগোশ, আর বন মোরগ চোখে পড়ে। একথায় লোভাছড়া চা-বাগান বন্যপ্রাণীরও অভয়াশ্রম। লোভাছড়ায় পর্যটকের জন্য থাকার কোন সু-ব্যবস্থা না থাকলেও বাগান মালিক কর্তৃপক্ষের জন্য রয়েছে ৪টি বাংলো। বাংলোগুলোর বাহ্যিক দৃশ্যগুলোও বেশ নান্দনিক। বাংলোর কাছাকাছি জায়গায় রয়েছে কয়েকটি কফি গাছ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব এই রূপ ‘লোভাছড়া’ কেবল পর্যটক আকর্ষণ নয়, দেশের অর্থনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। লোভাছড়া বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে চলা লোভা নদী থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করেন। এই নদীর পাথর ও বালু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যায়। লোভাছড়া এলাকার জনসাধারণ চাষাবাদ এবং পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এলাকার মানুষগুলো খুবই সহজ সরল। লোভাছড়ায় টিলার উপর একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ী রয়েছে। ১৯০৯ সালে একজন সমাজ সেবক ইংরেজ মেজর লোভা ছড়ায় এসে জমিদারীর গোড়া পত্তন করেন।

কিভাবে যাবেনঃ
সিলেট থেকে প্রথমে ৪০ টাকার বাস ভাড়া দিয়ে কানাইঘাট উপজেলা সদর আসতে হবে। তারপর নৌকা ঘাটে এসে ইঞ্জিন নৌকার মাধ্যমে ২৫ টাকার ভাড়া দিয়ে আপনি লোভাছড়া পাথর কোয়ারী পৌঁছাতে পারবেন।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *