সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ
বালিয়া মসজিদ( Balia Mosque ) বা ছোট বালিয়া জামে মসজিদ অথবা জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে পঞ্চগড় এর বোদা উপজেলা যাওয়ার পথে ভূল্লী হাট নামক জায়গা থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ভূল্লী-পাঁচপীর হাট সড়কের পাশে ছোট বালিয়া জামে মসজিদ অবস্থিত ।কোন এক অমাবস্যার রাতে জ্বীন-পরীরা এই এলাকা উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এলাকাটি পছন্দ করে । তারপর তারা মাটিতে নেমে এসে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করে, কিন্তু গম্বুজ তৈরির আগেই ভোর হয়ে যাওয়াতে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। ফলে গম্বুজ ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকে অসাধারণ কারুকার্যময় মসজিদটি । জ্বীন-পরীরা এটি তৈরি করেছে, এইজন্য স্থানীয়দের কাছে এটি জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত ।
মসজিদ নির্মাণের সন নিয়ে মতবিরোধ আছে । মসজিদের গায়ে খোদাই করা সন অনুসারে মসজিদটি নির্মিত হয় ১৩১৭ বঙ্গাব্দে মানে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ । আবার মসজিদের নির্মাতা মেহের বকস চৌধুরীর কবরেও তার মৃত্যুর সন খোদাই করা আছে ১৩১৭ বঙ্গাব্দ। তবে স্থানীয় মানুষ ও মেহের বকস এর আত্মীয়-স্বজনদের মতে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বালিয়া মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং মেহের বকসের মৃত্যুর সময়েই মসজিদটির বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়ে।
জমিদার মেহের বকস চৌধুরী উনবিংশ শতাব্দী শেষ ভাগে বালিয়াতে এক মসজিদ তৈরীর পরিকল্পনা করেন । এই জন্য দিল্লির আগ্রা মতান্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে স্থপতি আনা হয় । মুঘল স্থাপত্যেররীতি অনুযায়ী ডিজাইনকৃত এই মসজিদ তৈরির করাটা ছিল অনেক জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার । হঠাৎ প্রধান স্থপতির মৃত্যুর ফলে মসজিদ নির্মাণের কাজ থেমে যায় । মেহের বকস স্থানীয় কারিগরের সহায়তায় পুনরায় মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় কারিগরগণ মসজিদের গম্বুজ নির্মাণে ব্যর্থ হন । ১৯১০ সালে মেহের বকস চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
মেহের বকসের ছোট ভাই কয়েক বছর পর মসজিদটি নির্মাণের জন্য আবারও উদ্যোগ নেন। কিন্তু, নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না করে তিনিও মৃত্যু বরণ করেন। ফলে মসজিদটি ১০০ বছর গম্বুজ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকে।
অবশেষে মেহের বকস চৌধুরীর প্রোপৌত্রি তসরিফা খাতুনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের কারিগরী সহায়তায় ২০১০ সালে বালিয়া মসজিদটির সংস্কার কাজ শুরু হয় । একই সাথে আর্কিটেক্ট সৈয়দ আবু সুফিয়ান কুশল এর নকশায় নতুন ভাবে গম্বুজ নির্মাণ করা হয় ।
যা যা দেখবেনঃ
এখানে পাশেই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। এদের জীবন ধারাও দেখে যেতে পারেন। এছাড়া শীতকালে সদর উপজেলার বুড়ির বাঁধ এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা চোখে পড়ে।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে ঠাকুরগাঁও এ যাওয়া যায়। শ্যামলী, গাবতলি থেকে ঠাকুরগাঁও এ যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যায়।