সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
ত্রিপুরাদের ধারণা, স্থানীয় ব্যক্তিদের আশীর্বাদস্বরূপ দেবতা নিজে এ পুকুর( Debota Pukur Khagrachari )করে দিয়েছেন। তাদের মতে, এ পুকুরে গোসল করলে মনোবাসনা পূরণ হবে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের ওপর এই পুকুরের অবস্থান। প্রতিবছর বৈসুকে এখানে তীর্থ মেলা বসে। খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি-রাঙামাটি সড়কের সাত কিলোমিটার গেলে মাইচছড়ি। এই মাইচছড়ি থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে নুনছড়ি গ্রাম। এই নুনছড়ি গ্রাম থেকে এক কিলোমিটারের পাহাড়ি পথ বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই দেবতা পুকুর। এ পুকুরের স্বচ্ছ স্থির জলরাশি পর্যটকদের মনে প্রশান্তি জোগাবে।
প্রাকৃতিক এই দৃশ্য ছাড়াও এ অঞ্চলের আদিবাসীদের, বিশেষত, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি জানতে আপনি পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর অরণ্য কুটির, দীঘিনালা বন বিহার, খাগড়াছড়ি শহরের কেন্দ্রস্থলে শতবর্ষের পুরোনো য়ংড বৌদ্ধমন্দিরে ঘুরে আসতে পারেন।
খাগড়াছড়ি জেলার মাইসছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজায় অবস্থিত সমুদ্র সমতল হতে প্রায় ৭০০ ফুট উপরে ৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত হ্রদটিই আসলে দেবতার পুকুর নামে পরিচিত। কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জল তৃঞ্চা নিবারণের জন্য স্বয়ং জল-দেবতা এ পুকুর খনন করেন। পুকুরের পানিকে স্থানীয় লোকজন দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে। দেবতার অলৌকিকতায় পুকুরটি সৃষ্ট বলে এতো উঁচুতে অবস্থানের পরও পুকুরের জল কখনও শুকোয় না।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে মাত্র ০৫ কি:মি: দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের কোল ঘেষে অবস্থিত মাইসছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বত শ্রেণী হতে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। মূল রাস্তায় বাস থেকে নেমে কিলো দুয়েক পায়ে হাঁটা পথ। নিজস্ব পরিবহন থাকলে তা নিয়ে আপনি সোজা চলে যেতে পারেন একেবারে পাদদেশে নদীর কাছে। হাঁটতে হাঁটতে উঁচু পাহাড় যখন পাড়ি দেবেন তখন নিজেকে অনেকটা দিগ্বিজয়ীর মতো মনে হতে পারে আপনার।
ক্লান্ত হলে পাহাড়ের কোলে খানিকটা জিরিয়ে নিতে পারেন। যাওয়ার পথেই দেখা যাবে নুনছড়ি নদীর ক্ষীণ স্রোতের মাঝে প্রকান্ড পাথর। স্বচ্ছ জলস্রোতে স্থির পাথর আপনাকে মোহিত করবেই। প্রকৃতির অপূর্ব সাজে মুগ্ধতায় শিহরিত হবে আপনার মন। ছবি প্রেমিক পর্যটকরা এখানে ছবি তোলেন অনেকেই। সমুদ্র সমতল হতে ৭০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় দেবতার পুকুর রূপকথার দেবতার আশীর্বাদের মতো সলিল বারির স্রোতহীন সঞ্চার। বাংলাদেশের আর কোথাও এত উঁচুতে এমন সলিল সঞ্চিত বারির আধার আর নেই।
পুকুরের চতুর্দিকে মালভুমি দ্বারা বেষ্টিত বলে পাড়ে দাঁড়িয়ে এর সঠিক উচ্চতা অনুভব করা যায় না। পাঁচ একর আয়তনের এ পুকুরটির স্বচ্ছ জলরাশির মনভোলা প্রশান্তি মুহূর্তের মাঝে পর্যটকদের হৃদয় মন উদাস করে দেয়।
পুকুরের চতুর্দিকে ঘন বন, যেন সৌন্দর্যের দেবতা বর নিয়ে দাঁড়িয়ে। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নরনারী পূণ্য লাভের আশায় পুকুর পরিদর্শনে আসে। কিংবদন্তীর দেবতার পুকুরটি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কাছে পূজনীয়, খাগড়াছড়িবাসীর কাছে গৌরব এবং পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষনীয় প্রতীক।
কিভাবে যাবেনঃ
নুনছড়ি ত্রিপুরা পল্লীটি পর্যটন মোটেলের ১৩ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কের মাইছড়ি সেনা ক্যাম্পের ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। চান্দের গাড়ি অথবা লোকাল বাসে করে মাইছরি সেনা ক্যাম্প পর্যন্ত পৌছাতে পারবেন। সেখান থেকে এই পুকুরে পৌছাতে আপনাকে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পায়ে হাঁটতে হবে। তবে সাথে ব্যাক্তিগত গাড়ি থাকলে আপনি ত্রিপুরা পল্লী পর্যন্ত যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেনঃ
রাত যাপন করার জন্য খাগড়াছড়ির প্রধান বাজারে রয়েছে হোটেল মাসুদ। এখানে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে রুম রয়েছে। আদালত রোডে চৌধুরী বোর্ডিং, খাগড়াছড়ি বাজারে সম্প্রীতি হোটেল এবং কোর্ট রোডে রয়েছে শিল্পী বোর্ডিং। হোটেল থ্রিস্টার নারায়ণ রোডে অবস্থিত। এছাড়া পর্যটনের মোটেলও রয়েছে।