হাজিগঞ্জ দুর্গ | নারায়ণগঞ্জ

0
346
Hajiganj Fort

সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

হাজীগঞ্জ দুর্গ( Hajiganj Fort ) মুঘল আমলে নির্মিত একটি জল দুর্গ। এটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার হাজীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত। ঢাকা শহর কে রক্ষা করতে সপ্তদশ শতকের আগে পরে যে তিনটি জল দুর্গকে নিয়ে ত্রিভূজ জল দুর্গ বা ট্রায়াঙ্গল অব ওয়াটার ফোর্ট গড়ে তোলা হয়েছিল তারই একটি হলো এই হাজীগঞ্জ দুর্গ; সম্ভবত মুঘল সুবাদার ইসলাম খানকর্তৃক ঢাকায় মুঘল রাজধানী স্থাপনের অব্যবহিত পরে নদীপথে মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়। দুর্গটি রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪.৬৮ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত।

সপ্তদশ শতকের পূর্বে ঢাকাকে রক্ষা করতে গড়ে উঠেছিল যে তিনটি ত্রিভূজ জল দুর্গ তার একটি হল হাজিগঞ্জ দুর্গ। এটি শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছিল। অপর দুটির একটি হল সোনাকান্দা দুর্গ যা বন্দর এলাকার ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গমস্থলের কিনারে এবং পরটি ইদ্রাকপুর দুর্গ যা মুন্সিগঞ্জে জেলায় অবস্থিত।

প্রাচীন কালে বুড়িগঙ্গা নদী এসে লক্ষ্যা নদীর সাথে এই স্থানে মিলিত হত। মুঘল আমলের প্রথম দিকে স্থানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোন লিখিত প্রমাণ না থাকায়, এটি ১৬৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। এটি কে নির্মাণ করেছেন তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। লেখক মুন্সি রহমান আলী তাঁর এক গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় যে, মীর জুমলা ১৬৬০-১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দুর্গটি নির্মাণ করেন। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের মতে, যেমন হাসান (১৯০৪), তালিস (১৯৮৫) এবং আহমেদ (১৯৯১), দুর্গটির নির্মাতা হলেন মীর জুমলা।অন্যদিকে অন্যান্য লেখকদের মতে, যেমন দানি (১৯৬১) ও তাইফুর (১৯৫৬), এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। আহম্মাদ হাসান দানি তার মুসলিম আর্কিটেকশ্চার ইন বেঙ্গল গ্রন্থে লিখেছেন, ইসলাম খান ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করার পর এটি নির্মাণ করেন।

মুগল সেনাপতি মির্জা নাথান তার বাহারিস্তান-ই-গায়বীতে উল্লেখ করেন, সে তার বিশাল সৈন্য বাহিনী সহকারে খিজিরপুরে (বর্তমান হাজীগঞ্জ) প্রধান ঘাটি স্থাপন করেন। নদী তীরবর্তী স্থানে সেনাদের ছাউনি স্থাপন করেছিলেন। তিনি ১৬১০ সালে মুগল রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করার পূর্বেই ‘ভুঁইয়া’দের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই এলাকাটিকে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

তাই ধারনা করা হয় বাহারিস্তান-ই-গায়বী’র খিজিরপুরই বর্তমানের হাজিগঞ্জ, এবং স্থাপনাটি খিজিরপুরের অন্তর্ভুক্ত ছিল যা হয়তো পরবর্তীতে পুনঃ নির্মাণ করা হয়েছিল  মোগল যুগের পূর্বে এ অঞ্চলে আরেকটি দুর্গ ছিল বলে জানা যায়। যা খিজিরপুর দুর্গ নামে পরিচিত। অনেক গবেষক মত প্রকাশ করেছেন— খিজিরপুর দুর্গের ওপরই হাজীগঞ্জ দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং ভৌগোলিক কৌশলগত দিক বিচারে এই মত নির্বিচারে গ্রহণ করা যায় না। নির্মাণযুগে হাজীগঞ্জ দুর্গটি শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁষে ছিল। এখন নদী বেশ কিছুটা পূর্বদিকে সরে গিয়েছে।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।