হাতিরঝিল | ঢাকা

সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

হাতিরঝিল( hatirjeel dhaka )বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি এলাকা যা জনসাধারণের চলাচলের জন্য তৈরী করা হয়েছে। এ প্রকল্প এলাকাটি উদ্ধোধন ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি। এ প্রকল্প চালুর ফলে ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজারের এলাকার বাসিন্দাসহ এ পথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন’ (এসডব্লিউও)। এ প্রকল্পের অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং শ্রীবৃদ্ধি করা।

হাতিরঝিল নামের ইতিহাসঃ
ভাওয়ালের রাজার এস্টেটের হাতিরঝিলসহ তেজগাঁও এলাকায় অনেক ভূসম্পত্তি ছিল। এস্টেটের হাতির পাল এখানকার ঝিলে স্নান করতে বা পানি খেতে বিচরণ করত বলে কালের পরিক্রমায় এর নাম হাতিরঝিল হয়।
হাতিরঝিল প্রকল্পটি এক হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩০২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা। অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে রয়েছে রাজউকের ৪৬ শতাংশ, ‘কোর্ট অব ওয়াক্স’-এর ৮১ একর, পাবলিক ল্যান্ড ১৪১ একর ও বিটিভির ১ একর। প্রকল্পটি ২০০৭ সালের অক্টোবরে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়।

৩ বছর মেয়াদের এ প্রকল্পটি প্রথমে ২০১০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। পরবর্তীতে প্রকল্পটি সংশোধন করে আরো দেড় বছর সময় ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়। প্রকল্প ব্যয় ১ হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজউকের ১ হাজার ১১৩ কোটি ৭ লাখ, এলজিইডির ২৭৬ কোটি এবং ঢাকা ওয়াসার ৮৬ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগের লক্ষ্যে হাতিরঝিল প্রকল্পে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেস রোড নির্মাণ, স্থানীয় জনগণের যোগাযোগ সহজ করার জন্য ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সার্ভিস রোড, ৪৭৭ দশমিক ২৫ মিটার দীর্ঘ চারটি ব্রিজ নির্মাণ, পথচারী ও ভ্রমণকারীদের সুবিধার্থে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত এবং ৯ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ লেক সাইড ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ২৬০ মিটার দীর্ঘ তিনটি ভায়াডাক্ট নির্মাণ এবং প্রকল্প এলাকা যানজটমুুক্ত রাখতে ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওভারপাস, ইন্টারসেকশন ও রাউন্ডঅ্যাবাউট নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পে ১০ দশমিক ৪৫ কোটি ঘনফুট বর্জ্য অপসারণ, ১০ দশমিক ৪০ কিমি মেইন ডাইভারশন স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপন করে প্রকল্প এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করবে।

কিভাবে যাবোঃ
বাস কিংবা সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ঢাকার যে কোন এলাকা থেকে হাতির ঝিলে আসতে পারবেন। হাতিরঝিল প্রকল্প ঘুরে দেখার জন্য আছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। বর্তমানে ২৯ আসনের চারটি মিনিবাস হাতিরঝিলের চারপাশের দশটি স্টপেজ থেকে যাত্রী তুলে এবং নামিয়ে দেয় । টিকেট পাওয়া যায় রামপুরা, মধুবাগ, এফডিসি মোড়, বৌবাজার, শুটিং ক্লাব ও মেরুল বাড্ডা এই ছয়টি কাউন্টারে। এক কাউন্টার থেকে আরেক কাউন্টারে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। রামপুরা থেকে কারওয়ান বাজার গেলে লাগবে ১৫ টাকা। আর বাসে করে পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখা যাবে মাত্র ৩০ টাকায়। হাতিরঝিলে প্রতিদিন বাস চলাচল শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে এবং চলে রাত ১১ টা পর্যন্ত । সরকারি ছুটির দিন বা কোনো উৎসবের দিনও চক্রাকার বাস চলাচল বন্ধ থাকেনা।
কি খাবেনঃ
ঘুরা ফেরা করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন ? সমস্যা নেই হাতিরঝিলে রয়েছে স্ট্রিট ফুড থেকে রেস্টুরেন্টে মজার সব খাবারের আয়োজন। অভিজাত রেস্টুরেন্ট হিসেবে ক্রুয়া থাই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নিকেতন আড়ং এর পরেই রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট যা খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা অব্দি।আর একটি রেস্টুরেন্ট হল ওয়াটার ট্যাক্সি টার্মিনাল ২ এ। এফডিসি মোড়ের দিকে রয়েছে, রয়েছে রামপুরার মধুবাগের দিকে রেস্টুরেন্টের অবস্থান। এ ছাড়া হাতিরঝিলের বিভিন্ন পয়েন্টে আপনি পাবেন নানা ফুড কার্টে বাহারী খাবারের সন্ধান।

নিরাপত্তাঃ
দিনের বেলা হাতিরঝিল মোটামোটি নিরাপদ। কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথে হাতিরঝিলের নানা যায়গায় নিরাপত্তার অভাব বাড়তে থাকে । সড়কের দুইপাশে, ব্রিজের উপরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলেও নির্জন জায়গাগুলো ছিনতাইকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। চলাচল কারী মানুষ প্রায়ই বিরম্বনায় পড়েন, তবে বিশেষ করে যুগল ভ্রমণকারীদের প্রতি ছিনতাইকারীদের নজর বেশি থাকে। । ছিনতাইকারীরা প্রথমে নানান উপায়ে ঝগড়া বাঁধায়, এরপর ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করে। এসব ছিনতাইকারীরা পথচারীর বেশে ঘুরে বেড়ায় আর সুযোগের সন্ধানে থাকে। তাই নির্জন জায়গাগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে ইদানিং নানা স্থানে মাদক সেবীদের আড্ডা বাড়ছে।

অনেকেই গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় ড্রাইভ রেস করতে চলে আসেন। বিশেষ করে গুলশানের পুলিশ প্লাজায় দিক দিয়ে গুলশান থেকে রাত বাড়ার সাথে সাথে দামী গাড়ি নিয়ে ধনীর দুলালরা রেসে নেমে পড়ে। আমি রাত আড়াইটায় একদিন পুলিশ প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে এদের আনাগোনা প্রত্যক্ষ করেছি। এসময় দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকি থাকে।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *