সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ
চন্দ্রাবতী মন্দির( Poet Chandrabati Mandir ) বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত বাংলা আদি মহিলা কবি খ্যাত চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবাহী একটি স্থাপনা। চন্দ্রাবতী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম বাঙালি মহিলা কবি হিসেবে সুবিখ্যাত। চন্দ্রাবতী মন্দির বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। প্রকৃতপক্ষে মন্দিরটি একটি শিব মন্দির। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলাধীন মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে শিবমন্দিরটির অবস্থান।
ষোড়শ শতকের মনসা মঙ্গলের বিখ্যাত কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা ও বঙ্গের আদি মহিলা হলেন চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতী শিবমন্দিরটি বস্তত তাঁর বহু কাহিনী ও ঘটনাকে ধারণ করে। ষোড়শ শতকের দ্বিতীয় ভাগে কবি চন্দ্রাবতীর জন্য নির্মিত হয় এই মন্দিরটি। কবি চন্দ্রাবতী ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাধারী ও সম্ভাবনাময় সাহিত্যিক। নয়নঘোষ প্রনীত পালাগান ‘চন্দ্রাবতী’ থেকে জানা যায় যে, কৈশোরে চন্দ্রাবতী ও স্থানীয় এক ব্রাহ্মনযুবক জয়ানন্দের মধ্যে মনের আদান-প্রদান হয়। তাদের এ ভালবাসার কথা চন্দ্রাবতীর পিতা বংশীদাস মেনে নেন। কথা অনুযায়ী তাদের মধ্যে তিনি বিয়ের ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু পরিশেষ জয়ানন্দ কথা অনুযায়ী বিয়ে না করে অপর এক মুসলিম রমণী কমলাকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের জন্য জয়ানন্দ ধর্মান্তরিত হন। এই ঘটনায় চন্দ্রাবতী ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি পিতার কাছে এসময় তাঁর উপাসনার জন্য একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া চন্দ্রাবতী সিদ্ধান্ত নেন তিনি চিরকুমারী থাকবেন। তাঁর পিতা কন্যার আবদার অনুযায়ী ফুলেশ্বরী নদী তীরে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সে অবধি এটি চন্দ্রাবতী মন্দির নামে দাঁড়িয়ে আছে ফুলেশ্বরী নদীতীরে।
যা যা দেখবেনঃ
চন্দ্রাবতী মন্দিরিটি আকৃতিতে অষ্টভুজাকৃতির। মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৩২ ফুট। এর আত বাহুর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৮ ফুট। মন্দিরের নিচতলায় আছে একটি কক্ষ ও তাতে প্রবেশের পথ। কক্ষের ভেতরে রয়েছে ৭টি কুলুঙ্গি। মন্দিরের দ্বিতীয় তলাতে আছে একটি প্রশস্ত কুলুঙ্গি এবং পোড়ামাটির সুদৃশ্য কাজ। দ্বিতীয় তলা থেকেই মন্দিরটি ক্রমশ সরু হয়ে ৩২ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এর চূড়ায় রয়েছে ১৯৯০ এর দশকে প্রত্নতত্ত্ব মন্দিরটির কিছু অংশ সংস্কার করে।
কিভাবে যাবেনঃ
যদিও কিশোরগঞ্জ শহরের বেশীরভাগ শিক্ষিত মানুষ এই মন্দিরগুলো এবং কবি চন্দ্রাবতী সম্পর্কে জানেন তারপরও মন্দিরগুলো খুঁজে পেতে আপনার সমস্যা হতে পারে। আপনি শহরের শহিদী মসজিদ স্ট্যান্ড থেকে কোন ইজিবাইক চালককে গাইড হিসেবে নিতে পারেন যিনি আপনাকে চন্দ্রাবতী গ্রামে প্রবেশের রাস্তার পাশে নামিয়ে দেবে। এখান থেকে মন্দিরে পৌছাতে হলে নরসুন্দা নদীর উপরে স্থাপিত সেতু অতিক্রম করে আপনাকে প্রায় সাত থেকে আট মিনিট হাঁটতে হবে। মন্দিরে পৌছাতে আপনি নীচের নির্দেশিকা অনুসরণ করতে পারেন।
১। শহিদী মসজিদ স্ট্যান্ড থেকে ১৫/- টাকা ভাড়ায় একটি ইজিবাইকে উঠুন এবং চালককে বলুন আপনাকে চন্দ্রাবতী গ্রামের কাছে (অর্থাৎ জালালগঞ্জ স্টেশন অতিক্রম করে ২ মিনিট থেকে ৩ মিনিট পর) নামিয়ে দিতে। জিপিএস নেমে যাওয়ার স্থানটির অবস্থান হলঃ (২৪°২৯’৪৬.৮৫”উ, ৯০°৪৭’৪২.৬১”পু).
২। এখান থেকে নদীর উপরে স্থাপিত সেতু অতিক্রম করে আপনাকে কিছুদুর হাঁটতে হবে।