টাংগুয়ার হাওর | সিলেট

0
442

সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ

বাংলাদেশের সবচেয়ে দর্শনীয় ও দ্বিতীয় বৃহত্তম হাওর হলো সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর। ভরা বর্ষায় যেন মায়াবী রূপে ধরা দেয় এ হাওর( tanguar haor sylhet )।। হাওরের কোথাও চোখে পড়বে হরেক রকমের শাপলার মেলা, কখনো নানা গাছগাছালির অপরুপ সাজ, কখনো মিলবে টলটলে নীল জলের খেলা আবার কখনো শান্ত হয়ে বয়ে চলা। ছবির মত সুন্দর বাউলাই নদী এর পথের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন! সাথে রয়েছে মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা মোহনীয় জাদুকাটা নদী আর বারিক্কা টিলা।টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি।

স্থানীয় বাংলাদেশী জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পরিযায়ী পাখিরও আবাস এই হাওর। এ হাওরে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এই হাওড়ে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খ চিল, পাতি কুট (এই হাওরের ২৮-২৯%) ইত্যাদি পাখির নিয়মিত বিচরণ এই হাওরে। এছাড়া আছে বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুড়ুল (বাংলাদেশে এর নমুনাসংখ্যা ১০০টির মতো)।

২০১১’র পাখিশুমারীতে এই হাওরে চটাইন্নার বিল ও তার খাল, রোয়া বিল, লেচুয়ামারা বিল, রুপাবই বিল, হাতির গাতা বিল, বেরবেরিয়া বিল, বাইল্লার ডুবি, তেকুন্না ও আন্না বিলে প্রায় ৪৭ প্রজাতির জলচর পাখি বা ওয়াটারফাউলের মোট ২৮,৮৭৬টি পাখি গণনা করা হয়। এই শুমারিতে অন্যান্য পাখির পাশাপাশি নজরে আসে কুট, মরিচা ভুতিহাঁস, পিয়ংহাস; সাধারণ ভুতিহাঁস, পান্তামুখী বা শোভেলার, লালচে মাথা ভুতিহাঁস, লালশির, নীলশির, পাতিহাঁস, লেনজা, ডুবুরি, পানকৌড়ি ইত্যাদি পাখিও।
এছাড়াও ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৪ প্রজাতির সাপ, বিরল প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটিসহ নানাবিধ প্রাণীর বাস, এই হাওরের জীববৈচিত্র্যকে করেছে ভরপুর।
অধ্যাপক আলী রেজা খান-এর বর্ণনানুযায়ী এই হাওরে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২’র বেশি প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০-এর বেশি প্রজাতির সরিসৃপ এবং ১০০০-এরও বেশি প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণীর আবাস রয়েছে। (প্রেক্ষিত: জানুয়ারি ২০১২)।

কিভাবে যাবোঃ
সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন মামুন ও শ্যামলী পরিবহন এবং মহাখালী থেকে এনা পরিবহনের বেশ ক’টি ডে-নাইট বাস ছয় ঘন্টায় সরাসরি সুনামগঞ্জে যায়। সেখানে শহরে হোটেলে দুই বেডের একটি রুমের ভাড়া ৩০০-৪৫০ টাকা। আর এসির ভাড়া প্রায় দ্বিগুন। শহর থেকে সুরমা নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে বৈঠাখালি বা মনিপুর ঘাটে গেলে সেখান থেকে ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যে কোন সময় মোটর সাইকেল বা লেগুনা ভাড়া করে তাহিরপুর যাওয়া যায়।

এতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে। লেগুনাযোগে তাহিরপুর যেতে চাইলে সুনামগঞ্জ শহর সংলগ্ন সাহেববাড়ী ঘাট দিয়ে মনিপুর ঘাটে যেতে হবে। এতে প্রায় সময় লাগবে ২০ মিনিট। মনিপুর ঘাটে লেগুনা ও মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাওয়া যায়। আর মোটর সাইকেলযোগে তাহিরপুর যেতে চাইলে সুনামগঞ্জ শহর সংলগ্ন মল্লিকপুর ঘাট দিয়ে পাঁচ মিনিটে সুরমা নদী পার হয়ে বৈঠাখালী ঘাটে পৌঁছে সেখান থেকে মোটর সাইকেল ভাড়া করে তাহিরপুর যাওয়াটা সহজ। এরপর তাহিরপুর থেকে দেশী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে দু’ঘণ্টায় টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া যায়। তাহিরপুরে একমাত্র সরকারি ডাকবাংলোতে খুবই সীমিত সুবিধা রয়েছে।

যাবার আগে যে সব দিক বিবেচনা করবেন:

সুনামগঞ্জ টাঙ্গুয়ার হাওরের জন্য বিখ্যাত এবং সুনামগঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা টাঙ্গুয়ার হাওর। তাই চেষ্টা করুন অন্তত ১ রাত হাওরে কাটাতে, রাতটি আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাতগুলির ১ টি হবে। (তবে একটু সচেতন থাকবেন। মাঝি কে নিরাপদ জায়গায় নৌকা বাঁধতে বলবেন।)
লাখমাছড়া আর নীলাদ্রি দুটিই টেকেরঘাটে। দুটিই কাছাকাছি জায়গায়। ১৫-২০ মিনিটের দূরত্ব। ওদিকে বারেকের টিলার গা বেয়েই যাদুকাটা নদী। আর ওই রাস্তায় যাবার পথে বাজাই ঝর্ণা পরবে। তাই টেকেরঘাট-লাখমাছড়া-নীলাদ্রি-বাজাই ঝর্ণা-বারেকের টিলা-যাদুকাটা নদী, রুটটা খুব বড় মনে হলেও আসলে সব জায়গা ঘুরে শেষ করতে ৫-৬ ঘণ্টাও লাগবে না। তাই রুট কভারের টেনশনে তারাহুড়ো করবেন না।

সাতার পারুন বা না পারুন, অবশ্যই সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখুন। খরচ কমাতে চাইলে ঢাকা থেকে রাতে রওনা দিন, পরদিন রাত হাওরে কাটান, পরদিন সব স্পট ঘুরে দুপুরের বাসে বা শহর ঘুরে রাতের বাসে ঢাকা ফিরুন। সুনামগঞ্জ শহরে হাছন রাজার বাড়ি এবং সমাধি, নারায়ন তলা, গৈরারং জমিদার বাড়ি, আব্দুল করিমের বাড়ি ছাড়াও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দুপুরের শেষ বাস দুপুর ২.৩০ এ। এর পরের বাস রাত ৮.৩০ এ। তাই সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় বাসে ফিরতে চাইলে বাস টাইমগুলো খেয়াল রাখুন। শুক্রবার দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকে। তাই শুক্রবার রাতে হাওরে থাকতে চাইলে খরচ একটু বেশি পড়তে পারে। ট্রেনে যাতায়াত করলে খরচ আরও কমাতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য সুনামগঞ্জ পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে বেশ কিছু আবাসিক হোটেলের দেখা মিলবে। নিজের চাহিদামতো বাছাই করে নিন। উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে মানসম্মত হোটেলের সংখ্যা কম। যদি নৌকায় রাত পাড়ি দেন, সে ক্ষেত্রে হোটেলের প্রয়োজন পড়বে না।

কোথায় খাবেন

সুনামগঞ্জ সদরের রোজ গার্ডেন রেস্টুরেন্টটি বেশ ভালো। এ ছাড়া তাহিরপুর বাজারেও বেশ কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে। নৌকায় খাবারের আয়োজন না করলে অনায়াসে স্বল্প খরচে টেকেরঘাট বাজারেই রাত/দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। বারেকের টিলায় খাবারের মূল্য কিছুটা বেশি, তবে দু/তিনটি মধ্যমানের খাবারের হোটেলের দেখা পাবেন।

যা যা দেখবেনঃ
টাঙ্গুয়ার হাওরে মন উজাড় করে ঘুরুন, অসাধারণ ভালোলাগা কাজ করবে। টাঙ্গুয়ার হাওরে অবস্থিত ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো হাওর এলাকা দেখার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ারের নিচে স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতে পারেন। নীলাদ্রির নয়নাভিরাম দৃশ্যে নিশ্চিত আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। রাতের বেলায় নৌকায় শুয়ে শুয়ে হাওরে জোছনা উপভোগ করুন। বিশ্বাস করুন, সমস্ত দুঃখ নিশ্চিত শুভ্রতায় পরিণত হবে। রাতে থাকাটা যথেষ্ট নিরাপদ, সুতরাং ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
লাখমাছড়া ঝর্ণার রূপ উপভোগ করুন,

এ ছাড়া টেকেরঘাটেই অবস্থিত চুনাপাথরের খনিটাও ঘুরে দেখতে পারেন। বারেকের টিলা থেকে যাদুকাটা নদী আর ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়গুলোর রূপ উপভোগ করুন। এখান থেকে যাদুকাটা নদীর অপর প্রান্তের লাল বালুর বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে নদী আর পাহাড়ের মিলে থাকার রসায়ন দেখলে কী যে ভালো লাগবে, চিন্তাও করতে পারবেন না। অদ্ভুত সুন্দর!! অবশ্যই যাদুকাটা নদীতে গোসল করতে ভুলবেন না। যাদুকাটা নদী পাড়ি দেওয়ার সময় পুনরায় লাল বালুর বিস্তীর্ণ এলাকার সঙ্গে নদী আর পাহাড়ের মিলে থাকার রসায়ন দেখতে পাবেন।বারেকের টিলা আর যাদুকাটা নদী থেকে দুই রকমের রূপ দর্শন করতে পারবেন। দুটি দৃশ্যের প্রকৃতি সম্পূর্ণ আলাদা।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।