ত্লাবং ঝর্ণা | বান্দরবন

0
491

পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা সুমিষ্ট পানির নহর সব সময়ই ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের বড় আকর্ষণ( Tlabong Jhorna Bandarban )। ভরা বর্ষায় এইসব ঝর্ণা জেগে উঠে পূর্ণ স্পন্দনে। বান্দরবানের পাহাড়ের বুকে গহীন অরণ্যে অনেক ছোট বড় দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা লুকিয়ে আছে। এখানকার চমৎকার একটি ঝর্ণা হচ্ছে ডাবল ফলস। এর আরো অনেক নাম আছে, যেমন ত্লাবং ঝর্ণা বা ক্লিবুং ঝর্ণা। বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ঝর্ণার মধ্যে এই ডাবল ফলস অন্যতম। যদিও এখানে যাওয়া নিয়ে আর্মির নিষেধাজ্ঞা থাকে অনেকসময়ই।

রেমক্রি খালের উৎস এই ত্লাবং ঝর্ণা থেকেই। এই ঝর্ণাটির উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এর পানি দুটি ধারায় উপর থেকে নেমে আসে। এই ধারা দুটির ও আছে আলাদা নাম। দুটি ঝিরির বাম পাশের টা প্রানশা এবং ডান পাশেরটা পাংখিয়াং মিলে এই ডাবল ফলস ঝর্ণাটি তৈরি হয়েছে। এর দরুন এঁকে জোড়া ঝর্ণা নামেও ডাকা হয়।
আনুমানিক ৭০ ফুট উপর থেকে নেমে আসা এই ঝর্ণার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এঁকে দেখতে আসে। চারপাশটা সবুজ গাছগাছালি ঘেরা নির্জন নিস্তব্ধ পরিবেশ। প্রবল বেগে দুটি ধারা দিয়ে নেমে আসা শীতল জলে ভ্রমণকারীরা সিক্ত হয় এখানে।
‘ত্লাবং’ একটি বম শব্দ। এর অর্থ পানি ধরে রাখার ‘বেসিন বা গর্ত’। উপর থেকে দুটি ধারায় ঝর্ণার পানি প্রবল স্রোতে নেমে এসে নিচে একটি কূপ সৃষ্টি হওয়ায় এই নামটি দেয়া হয়। আর এই কূপের ফলে দীর্ঘ সময় সাঁতরে কাটিয়ে দেয়া যায় এখানে। গ্রীষ্ম, বর্ষা সব সময়ই কম বেশি জলের দেখা পাবেন এই ঝর্নায়।

সুংসাং পাড়ার নিচেই অবস্থিত এই প্রাকৃতিক ঝর্ণার আরেকটি চমৎকার দিক আছে। এর দুটি ধারার একটির জল অন্যটির চাইতে কম শীতল। তার কারণ একেবারে ঠাণ্ডা পানিটা আসছে দূরের বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম জারুছড়িপাড়া থেকে, আর অন্যটা সুংসানপাড়ার নিচের এক জায়গা থেকে। এই জল নিচে মিলেমিশে বয়ে গেছে অমিয়াখুম, নাফাখুম হয়ে সাঙ্গু নদীতে।

কিভাবে যাবেনঃ

ত্লাবং ঝর্ণা বান্দরবানের বম গ্রাম হতে কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে এবং কেওক্রাডং থেকে এখানে যেতে সময় লাগতে পারে এক থেকে দু ঘণ্টা। আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে বান্দরবানে। ঢাকা থেকে ডলফিন, শ্যামলী, এস আলম পরিবহণ সহ বেশ কয়েকটি বাস রয়েছে এই রুটে। ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। বান্দরবানে নেমে বাসে বা চান্দের গাড়িতে করে রুমা সদরে। দু ঘণ্টার মতো দূরত্বে বাস ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। তারপর যেতে হবে বগালেক। চান্দের গাড়ি এবং ঝিরি পথ হয়ে বগা লেক যেতে পারেন। ঝিরি পথে যেতে সময় লাগবে ৪/৫ ঘণ্টা আর চান্দের গাড়িতে আড়াই তিন ঘণ্টা। ভাড়া পড়বে ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
বগালেক হয়ে বাকি পথ ট্র্যাকিং করে যতে হবে। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, সবুজ বন, নানা রকম পাখির কলরবের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে এক সময় পৌঁছে যাবেন কেওক্রাডং। পথ ফেরিয়ে আসতে দেখা মিলবে অপরূপ দার্জিলিং পারার। এর পর কিছুটা হেঁটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গ্রাম পাসিং পাড়া। এখানে দেখা মিলবে মেঘ আর বৃষ্টির খেলা। তারপর আরেকটু হেঁটে যেতে পরবে সুংসাং পাড়া। সুংসাং পাড়া ফেরিয়ে বনের ভেতর দিয়ে ঝিরি মাড়িয়ে এক সময় পৌঁছে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। এই পথটুকু পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় দু ঘণ্টার মতো।

থাকা খাওয়া:
বগালেকে রাতে থাকার সু-ব্যবস্থা আছে। ডাবল ফলস দেখার পরে রাতে থাকতে পারেন সুংসাং পাড়াতেও। পাহাড়ি চাল-সবজি-মুরগি সংগ্রহ করে নিজেরাই রান্না করতে পারেন অথবা আদিবাসী কারও সহযোগিতা নিতে পারেন। এই পরিবেশে এক রাত কাটিয়েই দেখুন, চমৎকার অভিজ্ঞতা হবে।

বিঃদ্রঃ
পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। অপচনশীল দ্রব্য পুড়িয়ে ফেলুন স্থান বুঝে। আর অবশ্যই পাহাড়িদের প্রতি ভালো আচরণ প্রদর্শন করবেন।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।