শাপলা গ্রাম | বরিশাল

সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

শাপলার রাজ্য( shapla gram ) সাতলা বিলের কথা এখন আর কারও অজানা নয়। এখানে বেড়াতে যেতে মন উতলা হয়ে আছে অনেক সৌন্দর্যপ্রেমীরই। সৌন্দর্যের স্বাদ পুরোটা পাওয়ার কিন্তু একটি যথাযথ সময় রয়েছে। যে কোনো সময় গেলেই হবে না!

চলছে বর্ষাকাল। অনেকেরই ধারণা বর্ষা মানেই সকল প্রকার জলজ ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আসলেই কি তাই? বর্ষা বলেই কি শাপলার রাজ্য এখন ফুলে ফুলে ঢাকা? না। বর্ষা শাপলার ঋতু নয়। এখন বেড়াতে গেলেও আপনি শাপলার দেখা পাবেন। তবে শাপলার লাল গালিচা পাবেন না।

বিখ্যাত এই সাতলা বিল যা কিনা এখন অনেক বেশি পরিচিত শাপলা বিল হিসেবে এখানে শাপলা হয় ৩ রঙের। ছবিতে লাল শাপলাই বেশি দেখা যায়, কারণ তাদের আধিক্য বেশি। কিন্তু এই বিলে আপনি নীল শাপলা আর সাদা শাপলার দেখাও পাবেন।

তো আসল কথায় আসা যাক। কখন যাবেন শাপলা বিলে? কখন গেলে সবুজ শাপলা পাতায় ঢাকা বিলে শাপলার ফুটন্ত দল আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেবে? কখন গেলে হাসিমুখ ফুলগুলো আপনার সেলফির সঙ্গী হবে?

 প্রথমত আপনি যে ঋতুতেই যান না কেন যেতে হবে ভোরে। বরিশাল থেকে এই গ্রামে পৌঁছতে সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো। তাই ভোর ৪ টায় রওনা দিতে হবে অন্তত। ৬টার মধ্যে পৌছে যাবেন বিলে। বিলেই পাবেন নৌকা বেড়ানোর জন্য। সকাল ৭ টা পেরোতেই কিন্তু ঘুমোতে শুরু করে ফুলেরা। আর এই অঞ্চলের যারা শাপলা বিক্রী করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারাও শাপলা তুলতে শুরু করেন, বাজারে নেবেন বলে। তাই বিলে চলে যান সূর্য উঁকি দিতে দিতেই।

আর হ্যাঁ, যে ঋতুতে সবচেয়ে বেশি শাপলা হাসে সেটি শীতকাল। সেপ্টেম্বার, অক্টোবার, নভেম্বার এই ৩ মাস এত শাপলা থাকবে বিলে যে গুণতে গেলে অংক ভুলে যাবেন আপনি! তাই প্রিয়জনকে নিয়ে সবচেয়ে সুন্দর ফুলেল একটি ভোর কাটাতে আসন্ন শীতেই ভ্রমণ করুন শাপলা বিল!

উল্লেখ্য যে, মনোরম এই এলাকাটিকে সর্বপ্রথম প্রচারের আলোয় নিয়ে আসেন সাংবাদিক আরিফ রহমান। তার প্রেরিত ছবি এবং খবরের কারণে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত অনেকেই এখানে ভ্রমণের প্যাকেজ তৈরী করেছেন।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে বরিশাল। উল্লেখযোগ্য লঞ্চ পারাবত-১২, সুরভী-৯, সুন্দরবন-১০, অ্যাডভেঞ্চার, পারাবত-১১, টিপু-৭। ডেক ভাড়া ১৫০-২০০…. কেবিন: ৯০০ (সিঙ্গেল) ও ১৮০০ (ডাবল)। লঞ্চ ছাড়ার সময়: রাত ৮:৩০ টা থেকে ৯ টা। লঞ্চ থেকে নেমে একটা মাহেন্দ্র (সিএনজি সদৃশ যান) রিজার্ভ করে সোজা সাতলা চলে যেতে হবে। এক মাহেন্দ্রতে সর্বোচ্চ ৭ জন বসতে পারে। ভাড়া নিতে পারে ১৫০০-২০০০ (আনুমানিক)। রিজার্ভ করার সময় বলে নিবেন যে সাতলার বাগদা অথবা নয়াকান্দি নামক স্থানে যাবেন। যা কিনা সাতলা বাজারের পরে অবস্থিত। না চিনলে সাতলা বাজার গিয়ে স্থানীয়দের জিজ্ঞেস করলেই পথ দেখিয়ে দিবে।

বরিশালের নথুল্লাবাদ থেকে শিকারপুর হয়ে সাতলা পর্যন্ত বাস আছে। ভাড়া ৯০ টাকা। কিন্তু বাসে গেলে বেশি সময় লাগবে। সাতলা গিয়ে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া নিয়ে বিল ঘুরবেন। নৌকা ও লোকজনের পরিমাণভেদে নৌকায় ভ্রমণের জন্য এ খরচের পরিমাণ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা হতে পারে। কেউ চাইলে ঢাকা-হুলারহাট-ভাণ্ডারিয়ার এমভি মহারাজ, ফারহান-১০, অগ্রদূত প্লাস, রাজদূত-৭ ইত্যাদি লঞ্চে (ডেকের ভাড়া ২৫০-৩০০ এবং সিঙ্গেল কেবিন ১০০০-১২০০) স্বরূপকাঠি নেমে স্থানীয় ট্রলারযোগে মিয়ারহাট থেকে বৈঠাকাটা-চৌমোহনা হয়ে সাতলা যেতে পারেন। ট্রলারে যাওয়ার জন্য যাতায়াত বাবদ ১৫০০-২৫০০ টাকা লাগবে। কেউ স্থলযোগে বাসে আসতে চাইলে হানিফ, সাকুরা, সোনারতরী বা বিআরটিসি বাসে সরাসরি বরিশাল এসে সাতলার বাসে যেতে পারেন। আর স্বরূপকাঠি পর্যন্ত বাসে আসার জন্য হানিফ, সোনারতরী বা সুগন্ধা পরিবহনে আসতে পারেন।

কোথায় থাকবেনঃ

থাকার জন্য খুব ভালো ব্যবস্থা নেই সাতলায়। তবে আরামদায়ক রাতযাপনের জন্য স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে তাদের আশ্রয়ে থাকা যেতে পারে। এতে খুব সকালে শাপলার বিলে ভ্রমণ আপনার জন্য সহজতর হবে। পার্শ্ববর্তী হারতা বাজারে রাতে থাকার জন্য স্বল্পখরচের দুটি হোটেল আছে, তবে সেটা শহুরে লোকজনের জন্য খুব একটা আরামদায়ক হবে না। আরামদায়ক রাতযাপনের জন্য অবশ্যই উজিরপুর বা বরিশালের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি সাতলার স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *