তাজিংডং | বান্দরবান

0
464

সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

গোটা বান্দরবানকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা চলে( tajingdong bandarban )। এখানকার মূল আকর্ষণই হলো যান্ত্রিক শহরের বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চল আর মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়। এখানে ভ্রমণপিপাসুরা শুধু ভ্রমণেই আসেন না, আসেন দুঃসাহসিকতা দেখাতে। সবুজের সমারোহ আর মেঠো পথ ধরে বেয়ে ওঠা পাহাড় আর পাহাড়।সব পাহাড়ের উঁচু পাহাড় বলে খ্যাত তাজিংডং।

বাংলাদেশের সর্বচ্চ পাহাড়ের নাম তাজিংডং। স্থানীয় ভাষায় তাজিং অর্থ বিশাল এবং ডং অর্থ পাহাড় একত্রে যার অর্থ দাড়ায় বিশাল পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪,৩০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই পাহাড়ে হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে এসে থাকেন। এখানে তাজিংডং ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় যাদের সংস্কৃতি এবং জীবন বৈচিত্র্য প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত। একসময় তাজিংডং এ পৌঁছানো দুরুহ হলেও বর্তমানে প্রচুর পর্যটক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এখানে এসে থাকেন। শুধু তাজিংডং এ নয় প্রকৃতির সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে এর আশেপাশেও।

বর্ষাকালে এখানকার সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা যায় না। তবে, শীতকালে অনেক পর্যটক এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পায়ে হেঁটে এসে থাকেন। তবে, বর্তমানে চান্দের গাড়িতে করে আপনি তাজিংডং এর কাছাকাছি পৌছাতে পারবেন। তবে, বাকি পথ আপনাকে পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হবে। শীতকালে এখানে আসলে আপনাকে গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। তাজিংডং এ পৌঁছানোর পথে হাঁটার অনন্য অভিজ্ঞতা আপনার মনে থাকবে বহুদিন।

কিভাবে যাবেনঃ
আপনাকে প্রথমে বান্দরবান আসতে হবে তাজিংডং যাবার জন্যে। দেশের যেকোনো জেলা থেকেই বান্দরবানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। ঢাকার কলাবাগান, সায়দাবাদ এবং ফকিরাপুল থেকে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে সহজেই বান্দরবানের আসতে পারেন।

এছাড়া মহানগর, তূর্ণা কিংবা চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে প্রথমে চট্টগ্রামে তারপর সোজা বান্দরবানে চলে যেতে পারেন। চট্টগ্রাম শহরের বদ্দারহাট থেকেও পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের নন-এসি বাস ৩০ মিনিট পরপর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এরপর বান্দরবান শহর থেকে বগালেক যেতে প্রথমে যেতে হবে রুমা বাজার। বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। লোকাল বাস কিংবা চাঁন্দের গাড়ি/জীপে করে রুমা বাজার যাওয়া যায়। বাসে যেতে হলে বান্দরবানের রুমা বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে ১ ঘণ্টা পর পর বাস রুমার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। দলগত ভাবে গেলে রুমা বাজার যেতে পারেন জীপ/চাঁন্দের গাড়িতে করে। এক গাড়িতে ১০-১৫ জন যাওয়া যায়। বান্দরবান শহরের জীপ স্টেশন ৩০০০-৪০০০ টাকা ভাড়ায় গাড়ি নিতে হবে।

জীপে করে গেলে সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মত। রুমা বাজার পৌঁছে আপনাকে গাইড ঠিক করে নিতে হবে। রওনা হবার আগে রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে যাবার অনুমতি নিতে হবে। সেখানে নিয়ম অনুযায়ী নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার লিপিবদ্ধ করতে হবে। আর অবশ্যই মনে রাখবেন বিকেল ৪ টার পর রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি কিছুতেই মিলবেনা। রুমা উপজেলা সদর থেকে পায়ে হেঁটে বগালেক হয়ে কেওক্রাডং এর পাশ দিয়ে আপনাকে তাজিংডং যেতে হবে।

কোথায় থাকবেনঃ
বান্দরবানে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউস রয়েছে। এ ছাড়া তাঁবুতে রাত যাপনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এখানে থাকতে প্রতিদিন রুমপ্রতি গুনতে হবে দেড় থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্য অনেক আকর্ষণীয় কটেজের ব্যবস্থা রয়েছে। সঙ্গে খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। এখানে থাকতে হলে প্রতিদিন গুনতে হবে ২ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। পর্যটন মোটেলেও সপরিবারে রাত যাপন এবং খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রাত যাপনে গুনতে হবে রুমপ্রতি দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত।

অ্যাডভেঞ্চার তাজিংডং
বেসরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশের চতুর্থ পর্বতশৃঙ্গ অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় এই তাজিংডং। উচ্চতায় খুব বেশি না হলেও ১২৮০ মিটার, আর এই পর্বতে পায়ে হেঁটে বেয়ে বেয়ে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া পাশের কেওক্রাডংও উচ্চতায় ৩য় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছে তাজিংডং। এর উপজাতীয় শাব্দিক অর্থ হচ্ছে— ‘তাজিং’ অর্থ বড় আর ‘ডং’ অর্থ পাহাড়। অর্থাত্ বড় পাহাড়। বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রি পাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত। রুমা উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড় দুটির অবস্থান। পাহাড়ি রাস্তা ধরে রয়েছে অসংখ্য নাম না জানা গাছের সারি।

আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বা এই বিষয়ে কোন কিছু জানানোর থাকলে নীচের মন্তব্য বিভাগে লিখতে ভুলবেন না । আপনার ভ্রমণ পিয়াশি বন্ধুদের সাথে নিবন্ধটি শেয়ার করে নিন যাতে তারাও জানতে পারে ।